Featured দেশজুড়ে

মুরাদনগরে কিস্তি দিতে না পারায় দুধের শিশুসহ জিম্মাদার থানার হাজতে

মোঃ নজরুল ইসলাম, মুরাদনগর কুমিল্লা, প্রতিনিধি:

চার মাসের শিশু তোহা আক্তার। এই বয়সে পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি, বুঝে না দুনিয়ার কোনো হিসাব-নিকাশ। অথচ মায়ের অপরাধে থানার হাজতের ভিতরে রাত কাটাতে হয়েছে নিষ্পাপ এই শিশুটিকে।

একই ঘটনায় স্ত্রীর অপরাধে ৪ ঘণ্টা থানার হাজতে নিরপরাধ স্বামীকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ওসি আজিজুল বারী ইবনে জলিলের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে স্থানীয়দের মাঝে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরের উত্তর পাড়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী সুমি আক্তার (২৬) তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের এনজিওর ঋণের টাকার জিম্মাদার হয়। পরে সেই ঋণের কিস্তির টাকা দিতে না পারায় জিম্মাদার সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয় সেই এনজিও কোম্পানি। তারই ধারাবাহিকতায় সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আসে মুরাদনগর থানায়। শুক্রবার বিকেলে মুরাদনগর থানার এসআই আলমগীর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সুমি আক্তারকে না পেয়ে তার অসুস্থ স্বামীকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে এসে ৪ ঘণ্টা হাজতে আটকে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে সুমি আক্তার কোলের শিশু তোহাকে নিয়ে থানায় হাজির হলে ছেড়ে দেয়া হয় তার স্বামীকে।

স্বামী আব্দুল মোতালেব অভিযোগ করে বলেন, যদি কোনো ধরনের অপরাধ করে থাকে সেটি আমার স্ত্রী করেছে। তার অপরাধে তো আর আমাকে অসুস্থ অবস্থায় ৪ ঘণ্টা থানার হাজতে আটকে রাখতে পারে না। আমার শিশু কন্যা তোহা কি অপরাধ করেছ, যে তাকেও সারা রাত থানার হাজতের ভেতরে আটকে রাখতে হলো। পুলিশ চাইলে কি আমার স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে থানার ভিকটিমদের রুমে রাখতে পারতো না? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নুরু বলেন, একজনের অপরাধে অন্যজনকে সাজা দিতে পারে না। শিশুদের জন্য আলাদা সেল থাকে, যদি পুলিশ হাজতে শিশুটিকে রাখে তাহলে এটা ঠিক হয়নি।

মুরাদনগর থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী ইবনে জলিল বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সুমি আক্তার ও তার শিশু সন্তানকে থানার হাজতের ভেতরে রাখার বিষয়টি মিথ্যা। কারণ আমার থানায় কোন নারী সেল নেই। তাকে থানার নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়েছে। অপরদিকে স্বামীকে তুলে এনে চার ঘণ্টা আটকে রাখার বিষয়টিও মিথ্যা। এ ধরনের কোন ঘটনাই মুরাদনগর থানায় ঘটেনি।

মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিযুষ চন্দ্র দাস বলেন, বিষয় আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি আমরা দেখতে হবে, যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *