অপরাধ

পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নিয়ে রশি টানাটানি

সমাধান ডেস্ক: পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণের যে প্রস্তাব বাংলাদেশ তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে করা হয়েছে তা নিয়ে বিজিএমইএ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে রশি টানাটানি চলছে। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যৌক্তিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা একে তামাশা বলে অভিহিত করছেন।

বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য যে মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বলেছেন, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবারই একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়ে থাকে। এখন সামনে মিটিং রয়েছে, সেখানে আলোচনা হবে। আলোচনার পরে দেখা যাবে কি হয়। কিন্তু আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি তা সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলেই দিয়েছি। না হলে সেটা দিতাম না।

এদিকে বিজিএমইএ’র প্রস্তাবিত নতুন মজুরি কাঠামোকে তামাশা ও মর্মান্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা। নতুন কাঠামোয় মজুরি যে পরিমান বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তা শ্রমিক নেতারা মানতে রাজি নন।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেন, ‘বিজিএমইএ যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মর্মান্তিক। তারা এত বছর পরে ৬ হাজার ৩৬০ টাকার কথা বলে। এটি কি করে সম্ভব! এখনইতো শ্রমিকরা নাইট করে এর থেকে বেশি পাচ্ছে। তাই বলতে গেলে সে হিসেবে মজুরি গতবারের থেকে আরো কমে গেছে।’

মিশু বলেন, ‘মজুরি বোর্ডে একজন নিরপেক্ষ সদস্য রয়েছেন। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, মজুরি বোর্ডে যারা রয়েছেন তারা বাংলাদেশকে বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখেন। সেই দিক থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি কত হওয়া উচিত সেটা তারা বোঝেন। আমরা একেবারে ভাগ করে করে দিলাম, চার জনের একটা পরিবারের কত টাকা লাগে এক দিনে, তা মিলিয়ে ১৬ টাকা করেছি। তাই আমরা প্রত্যাশা করব যারা মজুরি বোর্ডে রয়েছেন তারা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে ১৬ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করবেন।’

যদি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মজুরি বোর্ড থেকে চুড়ান্তভাবে বেতন কাঠামোর ঘোষণা না আসে তাহলে অক্টোবর মাস থেকে সারা দেশে ধর্মঘট পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আশা করছি এই আন্দোলনে সকল গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করবে। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে বিগত দিনগুলোতে সকল সংগঠন এক হয়ে আন্দোলন করেছি। আমাদের সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও আগামীতে শ্রমিকদের দাবি আদায়ে আমরা এক কাতারে থাকব।’

একই ধরণের কথা বলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ’র প্রস্তাব এক ধরনের তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, ৫ বছর আগে ৫ হাজার ৩০০ টাকা তারা নির্ধারণ করেছিল। তারা যে নতুন মজুরির প্রস্তাব করেছে তা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই না। কোনভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘গতবার যখন মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল তখনই আমরা বলেছিলাম এটিকে ৮ হাজার টাকা করার জন্য। আর এখন যেটা আমরা দাবি করছি (১৬ হাজার টাকা) সেটিও কিন্তু বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জিনিসপত্রের দাম, থাকা-খাওয়ার খরচ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সে তুলনায় একটু কমিয়েই ১৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সেটাই যদি তারা (বিজিএমইএ) মানতে না পারে তাহলে শ্রমিকদের উপর জুলুম বেড়ে যাবে। শোষণের মাত্রা বেড়ে যাবে। যদি আগামী ১২ তারিখ মজুরি বোর্ডে আমাদের দাবি মানা না হয় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘রাজধানীর বস্তির একটি ঘরে ভাড়া থাকতে গেলেও এখন ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা লাগে। সেখানে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কিছুতেই ৬ হাজার ৩৬০ টাকা হতে পারে না। এটি হলে শ্রমিকরা খাবে কি আর বাসা ভাড়া দেবে কি?

এদিকে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারখানার মালিকদের সক্ষমতার বিষয়টি যেমন দেখব তেমনিভাবে শ্রমিকের চাহিদার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। আর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এখনো হয়নি, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর আরো একটি সভা হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশা করছি।’

প্রসঙ্গত, তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চতুর্থ সভাও শেষ হয় কোনোরকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পঞ্চম সভায় এ মজুরী কাঠামো নির্ধারণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *