নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চিকিৎসক ও ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাতেই চট্টগ্রামে আড়াই বছর বয়সি শিশু, সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত তিন চিকিৎসকের যথাযথ শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে শিশু বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচ দিন তদন্তের পর এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করে।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস জানান, ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের অবহেলাতেই আমাদের সহকর্মী দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর সিনিয়র রিপোর্টার রাইফার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাইফার মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রাইফার পিতা-মাতা যে অভিযোগ করেছিলেন তার সত্যতা পাওয়া গেছে। রাইফা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার রোগ নির্ণয় ও ওষুধ প্রয়োগ যথাযথ থাকলেও রাইফা যখন খিচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। ওই সময় সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা ও জ্ঞান তাদের ছিল না।
ম্যাক্স হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি ও চিকিৎসা শুরুর প্রতিটি ক্ষেত্রে রাইফার অভিভাবকদের ভোগান্তি চরমে ছিল। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। রোগ জটিলতায় বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদান করেননি বলে রাইফার পিতা-মাতা যে অভিযোগ করেছেন, তা সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ম্যাক্স হাসপাতালে ভোগান্তি অনেক প্রকট। চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা প্রদানের সমন্বয় নেই, অদক্ষ নার্স ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ফলে এই হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পায় না রোগীরা।
তদন্ত প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফাকে চিকিৎসা প্রদানকারী শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরীসহ চিকিৎসায় অবহেলার দায়ে তিনজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কমিটিতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ছাড়াও অপর দুই সদস্য হলেন- চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালকের কাছে প্রেরণ করেছি। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন চট্টগ্রামের অভিজাত ম্যাক্স হাসপাতালে সামান্য গলা ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়ে সাংবাদিক কন্যা রাইফা খান চিকিৎসকদের অবহেলায় মারা যায়। এই ঘটনায় দোষী চিকিৎসকদের বিচার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা।