দেশজুড়ে বাংলাদেশ

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ৬টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সামগ্রিকভাবে যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য এলেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে : শনাক্ত না হওয়া যক্ষ্মা রোগী সেবার আওতায় না আসা, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব, নগরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ, তৃণমূল পর্যায়ে সর্বাধুনিক ডায়াগনস্টিক ব্যবস্থার সুযোগ না থাকা, এই রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রাইভেট চিকিৎসকদের কম সম্পৃক্ততা থাকা, যক্ষ্মা শনাক্তকরণ বাধ্যতামূলক না হওয়া।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাফল্য ও প্রতিবন্ধকতা; আসন্ন জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সভায় জাতীয় অঙ্গীকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, দৈনিক ইত্তেফাক ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ডা. রুপালী শিশির বানু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সরদার মুনিম ইবনে মহসিন।

দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আসিফুর রহমান সাগরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম, ন্যাশনাল অ্যান্টি টিউবারকিউলোসিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নাটাব) প্রেসিডেন্ট মোজাফফর হোসেন পল্টু, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ব্র্যাকের কমিউনিকেবল ডিজিজেস, ওয়াশ ও ডিএমসিসি কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞগণ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) যক্ষ্মারোগের মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বললেও আমি আশা করছি আগামী ছয় বছরের মধ্যে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। কারণ অল্প সময়ে যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করতে পারি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গি দমন করতে পারি, নারী ক্ষমতায়ন করতে পারি- তাহলে যক্ষ্মা কেন নির্মূল করতে পারব না?’

তবে এ লক্ষ্য অর্জনে তিনি সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকসহ এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক শক্তিকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন।

তিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ৪০ হাজার নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত ছিল। আমি দুই মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে এ সমস্যার সমাধান করেছি এবং ৪০ হাজার নার্স নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি।’

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আরো বেশি সচেতনতা গড়ে তুলতে গণমাধ্যম কর্মীদের আহ্বান জানান মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে কফে জীবাণুযুক্ত যক্ষ্মারোগী শনাক্তকরণের হার প্রতি লাখে ৮৬ জন। ২০১৭ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং চিকিৎসার আওতায় এসেছে। চিকিৎসার সফলতার হার শতকরা ৯৫ ভাগ, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে বাকি ৩৩ শতাংশ রোগী এখনো শনাক্তের বাইরে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ যক্ষ্মারোগে মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ এবং নতুনভাবে শনাক্তকৃত যক্ষ্মারোগীর হার ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরো যেসব সুপারিশ উঠে আসে সেগুলো হচ্ছে : সরকারের পাশাপাশি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলোর ফলপ্রসূ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা, রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেওয়া, এ সম্পর্কিত আচরণবিধি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জনসাধারণের মাঝে আরো প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া, মানসম্মত ওষুধ নিশ্চিত করা, চিকিৎসার জন্য স্বতন্ত্র এমডিআর হাসপাতালের ব্যবস্থা করা, শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণে অধিক মনোযোগী হওয়া ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত : যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, যক্ষ্মা নির্মূলে জাতীয় অঙ্গীকারের লক্ষ্যে প্রায় সব দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের অংশগ্রহণে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় যক্ষ্মা নির্মূলে বাংলাদেশের অঙ্গীকার ব্যক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *