জাতীয়

কিশোরগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা ও শেষ শ্রদ্ধায় সৈয়দ আশরাফ

নিজস্ব প্রতিনিধি: সবাইকে বিদায় জানালেন রাজনীতির আদর্শ ও অভিসাংবাধিক নেতা , বিদায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দেশবাসীর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বনানী কবরস্থানে সমাহিত হলেন তিনি। রেখে গেলেন নির্মোহ ও নিষ্কলুষ রাজনীতির অনুসরণীয় একটি অধ্যায়। রোববার (৬ জানুয়ারি) বাদ আসর চিরনিদ্রায় শায়িত হন শুদ্ধ রাজনীতির মানুষটি।

এর আগে দুপুরে কিশোরগঞ্জে নিজের শহরে লাখো মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানায় রাজনীতির এ বরপুত্রের প্রতি। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহে। সেখান থেকে ঢাকায়।

জানাজায় লাখো মানুষের ঢল: কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে সবাই দাঁড়ান এক কাতারে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ জানাজায় শরিক হন।

এছাড়া জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজল, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, বিপিএম, পরিবারের সদস্যবর্গ, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এবং সর্বস্তরের লাখো মানুষ।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা লোকজনও জানাজায় শরিক হন। দুপুর সোয়া একটায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা খলিলুর রহমান।

এর আগে দুপুর ১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। গার্ড অব অনার শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের জন্য মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এছাড়া দোয়া কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে কফিনে শুয়ে প্রিয় কিশোরগঞ্জের মাটিকে স্পর্শ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের আলোরমেলা এলাকার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মী তাঁর মরদেহ গ্রহণ করেন।

প্রিয় নেতার স্মরণে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সব দোকান-পাট বন্ধ রাখা হয়। কালো ব্যাজ ধারণ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সৈয়দ আশরাফের শুভানুধ্যায়ীরা।

জানাজা শেষে মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছুক্ষণের জন্য লাশ রাখা হয় ইদগাহ মাঠেই। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী, এরপর একের পর এক বিভিন্ন সংগঠন ও উপস্থিত সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের এই  নেতার প্রতি। প্রিয় শহর ছেড়ে অন্তিমযাত্রায় সৈয়দ আশরাফ ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে দুপুর ২টা ৯মিনিটে কিশোরগঞ্জ ছাড়েন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বছরের ৩রা জুলাই তাঁকে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ছয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩রা জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

থাইল্যান্ড থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ একটি ফ্লাইটে শনিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ দেশে পৌঁছায়। বিমানবন্দরেই এই মুক্তিযোদ্ধার কফিন ঢেকে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকায়। সেখান থেকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহবাহী গাড়ি রওনা হয় বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনের উদ্দেশে। রাতে মরদেহ বেইলি রোডের বাসা থেকে নিয়ে রাখা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে।

রোববার (৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় ও ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে মরদেহ ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বাদ আসরের পর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *