নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আসাদুজ্জামান নূর রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আরমান আলী এ আসামিকে সোমবার বিকেলে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আসামি পক্ষে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করে শুনানি করেন।
শুনানির প্রথমে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তার কী কী অধিকার, তা উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে বর্ণনা করেন। যা ওই আসামির প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পালন না করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে রক্তাক্ত এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসামির বক্তব্য শোনার জন্য আবেদন করেন।
আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে আসামি ড. শহিদুল আলম বলেন, ‘গতকাল (রোববার) রাতে আমি বাড়িতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বেল বাজে, আমি উঁকি দিয়ে একজন নারীকে দেখতে পাই। আমি দরজা খুলতেই দৃশ্যমান না থাকা ১০/১২ জন লোক ঘরে ঢুকে পরে এবং আমাকে জোর করে বাসা থেকে বের করে লিফটে তোলে। এরপর জোর করে লিফট থেকে নামিয়ে একইভাবে গাড়িতে তোলে। আমি শুরু থেকে চিৎকার করতে গেলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে। গাড়িতে তোলার পর আমার মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং হাতে হ্যান্ডকাপ পরায়। গাড়িতে থাকাকালে বিভিন্ন ধরনের গালাগাল দেয়। কিছু সময় পর আমাকে একটি জায়গায় নামায়। সেখানে আমাকে সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করায়।
তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে আমাকে তারা মুসার ও আইএস এর এজেন্ট বলে গালিগালাজ করে। প্রশ্ন করে আমার কতজন ছেলেমেয়ে। আমি ৪৭ জন ছেলেমেয়ে বললে বলে, কতজনকে পাচার করেছি। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে একজন আমার মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। রক্তে আমার পাঞ্জাবি ভিজে যায়। এরপর পাঞ্জাবি খুলে ধুয়ে ভিজে পাঞ্জাবি আমাকে পরতে দেয়। রাতে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় আমাকে একটি চাটাইয়ের ওপর রাখা হয়।’
আসামির বক্তব্যের পর ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, ‘মাননীয় আদালতের সামনে আসামি নিজে তাকে শাররীক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বলেছেন। এ ছাড়া এ আসামিকে গ্রেপ্তারে পর তার যে আইনগত অধিকার তা একটুও পালন করা হয়নি। আর আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সে বিষয়ের সমস্ত তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রয়েছে।’
ওই সময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তা আরমান আলীর কাছে জানতে চান, কেন রিমান্ড প্রয়োজন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এ আসামির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিদেশি শক্তি জড়িত আছে। বিচারক নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, উনি (ড. শহিদুল আলাম) একটু কল্পনাপ্রসূত কথা বলতে পছন্দ করেন। এ অভিযোগ সে রকমই। ওনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা যাচাইয়ের জন্য এবং ওনার সহযোগীদের নাম-ঠিকানা জানতে রিমান্ডের প্রয়োজন। এ ছাড়া ওনার যে আইফোন জব্দ করা হয়েছে তার পাসওয়ার্ডও আমাদের কাছে নেই।’
শুনানি শেষে আদালত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রোববার রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে একদল লোক শহিদুলকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ।
উল্লেখ্য, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলম চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।