সমাধান ডেস্ক : হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট আরো ৪ শতাংশ বাড়ানোর পরও হজযাত্রীর কোটা খালি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার রিপ্লেসমেন্টে যেভাবে শর্ত আরোপ করেছে তাতে ওই ৪ শতাংশ পূর্ণ হয় কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। হজযাত্রী সঙ্কটের মধ্যে শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট বাতিল। এ অবস্থায় হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, সরকার হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করার পরও প্রায় ৫ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ২৭ জুলাই থেকে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বহু টিকিট অবিক্রিত রয়েছে। এ সঙ্কট কাটাতে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট ১৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে হজযাত্রীদের কল্যাণে গঠিত তিনটি সংগঠন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর প্রথম দফায় ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয় সরকার। এরপর সম্প্রতি আরো অতিরিক্ত ৪ শতাংশ বাড়িয়ে মোট ৮ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো রিপ্লেসমেন্টের আবেদন দিচ্ছে। কিন্তু সরকার যেভাবে শর্ত আরোপ করেছে তাতে ওই কোটাও পূর্ণ হবে না। তাই শর্ত শিথিল করে রিপ্লেসমেন্ট চাইছে হজ এজেন্সিগুলো, না হলে হজযাত্রী পাঠাতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হজযাত্রী কোটা অপূর্ণ রয়ে যাবে। কোটা পূরণ করতেই ধর্মমন্ত্রী কিছুদিন আগে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে রিপ্লেসমেন্ট আরো ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেন।
এদিকে, কোটা পূরণ করতে ১৫ শতাংশ হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে হজযাত্রীদের কল্যাণে গঠিত তিনটি সংগঠন- বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদ, হাব ওলামা সোসাইটি ও হজ গাইড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।
শুক্রবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে তারা দাবি করেন, ৮ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টে হলেও আরো প্রায় ৫ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি থেকে যাবে।
লিখিত বক্তৃতায় বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, গত বছর সরকার ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দিয়েছিল। চলতি বছরে এখনো প্রায় ৫ হাজার হজযাত্রীর সম্পূর্ণ কাজ শেষ করার পরেও হজে যেতে পারছে না। ২৭ জুলাই থেকে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বহু টিকিট অবিক্রিত আছে। এ কারণে আমরা গত বছরের মতো ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। রোববারের মধ্যে এ দাবি স্তবায়নের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
প্রতি বছর হজযাত্রীদের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়ে ড. নাসের বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীরা প্রায় এক থেকে দেড় বছর আগে নিবন্ধিত হয়। এই দেড় বছরে অনেক হজ গমনেচ্ছু মারা যান, কিংবা অসুস্থ হন অথবা আর্থিকভাবে সঙ্গতি হারিয়ে ফেলেন।
রিপ্লেসমেন্টে আর্থিক অনিয়ম হলে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো হজ এজেন্সি যদি সরকারের সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকার চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে রিপ্লেসমেন্ট করে তাহলে সে এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া রিপ্লেসমেন্ট করা হাজি এবং ইনকামিং হাজি উভয়ের কাছ থেকে যদি কোনো হজ এজেন্সি অর্থ গ্রহণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে হাব ওলামা সোসাইটির সহ-সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী ও মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন, অর্থ সচিব আলহাজ জাহিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নুর আহম্মদ, বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আব্দুল বাতেন, হজ গাইড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি আলহাজ হারুন উর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. রাকিব উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ২০১৮ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ১ নং প্যাকেজ ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা এবং ২ নং প্যাকেজ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা। একইভাবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত জাতীয় হজ ও ওমরা নীতিমালার ৭.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সর্বোচ্চ দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। তবে হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন খরচ কোনো অবস্থাতেই সরকার ঘোষিত সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্যের কম হবে না। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বৈষম্যের নীতিমালা চালু করে যা হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার মূল কারণ। অথচ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো এজেন্সি সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্যের কম টাকা নিতে পারবে না। কিন্ত এটি মানা হচ্ছে না।
অভিযোগে আরো বলা হয়, চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের একটি ভাউচার ছিল ২৮ হাজার টাকা। চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় আরেকটি ভাউচারে ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৫৯ টাকা ব্যাংকে জমা প্রদান করেছে। এতে প্যাকেজের সব টাকা জমা হয়েছে। অপরদিকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথমে একটি ভাউচারে ৩০ হাজার ৭৫২ টাকায় প্রাক-নিবন্ধন হয়েছেন। চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় আরেকটি ভাউচারের মাধ্যমে বেসরকারি হজযাত্রীরা মাত্র ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধিত হয়েছেন। এভাবে প্যাকেজের পুরো টাকা জমা না দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা হজযাত্রীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিলেও হজ এজেন্সিকে জমা দেন ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাকি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে থেকে যায়। পরে হাজিরা সৌদি আরবে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হন। এ কারণে সরকারি ব্যবস্থার মতো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া একই রকম করার দাবি জানান তিনি।