জাতীয়

মধ্যরাতে ভাড়াটিয়াদের বের করে দেয়া বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা

ঘটনাটি রাজধানী ঢাকার অভিজাত পান্থপথ এলাকার। এক মাসের ভাড়া বাকি থাকায় দুই মাস বয়সী নবজাতকসহ তিন সন্তানকে নিয়ে এক দম্পতিকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন বাড়িওয়ালা। অসহায় ভাড়াটিয়া ঘরে ফিরতে চাইলে তাদের মারধর করেন, ডাকাতির মিথ্যা অপবাদও দেন। ঘরে জায়গা না পেয়ে তিন সন্তান নিয়ে সড়কে ঘুরতে ঘুরতে পুলিশের কাছে যান ওই দম্পতি।

মানবিক বিবেচনায় পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে পান্থপথের একটি হোটেলে পরিবারটির রাতে থাকার ব্যবস্থা করেন। এরপর পৌঁছে দেন সেই বাড়িতেই। তবে তাদের ঘরে পৌঁছে দেয়ার ঘটনাটির আগে ঘটে নানা নাটকীয়তা।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার (১৮ এপ্রিল) রাতের। ৫৮/৭ নম্বর পান্থপথ এলাকার দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতো পরিবারটি। বাড়ির মালিক শম্পা নামের একজন।

নিউমার্কেট থানার পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে বাড়ির মালিক শম্পা নিজেই জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করেন। ফোনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘তার একজন ভাড়াটিয়া বাড়িতে ভাঙচুর করছেন’। খবর শুনে বাড়িটিতে হাজির হয় পুলিশ।

দুপক্ষের কথা শুনে পুলিশ মূল ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। পুলিশ জানতে পারে, ভাড়াটিয়া ওই পরিবারের গৃহকর্তা পেশায় ছোট ব্যবসায়ী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে তিনি ব্যবসা করতে পারছেন না বিধায় তার এক মাসের ভাড়া বাকি পড়েছে। তাই তাদের নানা অজুহাতে বের করতে চাইছেন মালিক শম্পা।

শনিবার রাতে বাড়ির মালিককে বুঝিয়ে পরিবারটিকে ওই বাড়িতে রেখে আসে পুলিশ। তবে পুলিশের কথা অমান্য করে রোববার (১৯ এপ্রিল) দুই মাসের শিশুসহ পরিবারটিকে বাড়িছাড়া করেন শম্পা।

পুলিশ এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বাড়ির মালিক শম্পা জানান, ভাড়াটিয়া তাদের বাসায় ডাকাতি করেছেন। তার সিসিটিভি ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজ ও ডাকাতির প্রমাণ রয়েছে।

এবার সেখানে গিয়ে তার কাছে ডাকাতির প্রমাণ চায় পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে পুলিশ ডাকাতির কোনো প্রমাণ পায়নি। বরং ফুটেজে দেখা যায়, শম্পা নিজেই ভাড়াটিয়ার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছিলেন।

এবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন শম্পা। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, কেন ভাড়াটিয়ার নামে মিথ্যাচার করলেন? উত্তরে তিনি বলেন, তার একজন প্রতিবেশী তাকে এ কথা জানিয়েছিলেন। তখন প্রতিবেশীর নম্বর চায় পুলিশ। প্রথমে নম্বর দিতে গরিমসি করেন শম্পা। পরে একটি নম্বর দেন। সেই নম্বরে ফোন করে পুলিশ। অপর প্রান্ত থেকে যিনি ফোনটি রিসিভ করেন, তিনি পুলিশকে জানান, তিনি উত্তরায় থাকেন। শম্পা নামে কাউকে তিনি চেনেন না।

এরপর পুলিশ শম্পাকে ফের বুঝিয়ে ভাড়াটিয়াদের ঘরে ঢুকতে দেয়ার কথা বলে। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় ভাড়াটিয়ার ঘরটি বাইরে থেকে তালা মেরে চলে যান শম্পা। ভাড়াটিয়া পরিবারটি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলে রমনা বিভাগের পুলিশের পক্ষ থেকে পান্থপথের একটি হোটেলে তাদের জন্য রুম বুকিং করে রাতযাপন ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

দুদিনের পরিস্থিতি তদন্ত করে পুলিশ শম্পা নামের ওই বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মারধর-হত্যাচেষ্টাসহ কিছু অভিযোগের সত্যতা পায়। মামলা হয় শম্পার বিরুদ্ধে।

পরিবারটি সারারাত হোটেলে থাকার পর তাদের ঘরে তুলে দিতে এবং আসামি শম্পাকে গ্রেফতারে পান্থপথের ওই বাড়িতে যায় পুলিশ। তাদের ঘরে তুলে দিলেও শম্পাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তিনি মামলার খবর জেনে আগেই পালিয়ে যান।

পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মারধর করার কারণে সংশ্লিষ্ট ধারায় শম্পার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে আসামি পলাতক।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রে একটি দুর্যোগের সময় চলছে। ওই দম্পতির তিন সন্তান ছিল। এমন একটি সময়ে একটি পরিবারকে এক মাসের বাড়িভাড়া না দেয়ার কারণে বের করে দেয়া খুবই অমানবিক। তাই আমরা তাদের তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করি।

এ বিষয়ে জানতে শম্পার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করা হলেও তার নম্বরটিতে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এর আগে শুক্রবার ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম চিকিৎসক–নার্সসহ জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা পুলিশকে জানাতে বলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধ করতে যারা সমাজে যুদ্ধ করছেন, তাদের রাতযাপনের বিষয়টি সুরক্ষার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। তারা তাদের ডিউটি পালন করতে যথাযথ সুরক্ষা নিয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। এরপরও কতিপয় বাড়ির মালিক কাউকে বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এমন হুমকি কেউ পেলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ অথবা ৯৯৯– এ ফোন দেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।’

কমিশনার আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে এরূপ বিরূপ আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই বাড়ির মালিক ও সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *