সৌদি আরবে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ১৫ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত মক্কার মসজিদ আল-হারামে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মসজিদ আল-হারামের ইমাম শেখ ইমাম সালেহ বিন আবদুল্লাহ হোমাইদ। প্রতি বছরের মতো এবারো ফজর নামাজের আগে থেকেই ঈদের নামাজে অংশ নেওয়ার জন্য মসজিদ আল-হারামের ভিতরে এবং বাইরের চারপাশে জড়ো হন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক কাতারে শামিল হয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মুসল্লিরা মক্কার মসজিদ আল-হারামে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে মক্কার পাশের প্রদেশ জেদ্দা, তায়েফ, মদিনা, দাম্মাম, রিয়াদ, আবহা থেকে মানুষজন মসজিদ আল-হারামে আসেন। এছাড়া স্থানীয় নাগরিক, প্রবাসী ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ওমরাহ করতে আসা মানুষজনও নামাজে অংশ নেন। নামাজ শেষে ইমাম শেখ ইমাম সালে বিন হোমাইদ মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
সৌদি আরবের মদিনায় মসজিদে নববীতে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে। ঈদের জামাতে ইমামতি করেন ডক্টর শাইখ মোহসীন আল কাসেম। নামাজে মদিনার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ছাড়াও স্থানীয় বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মদিনাবাসী ছাড়াও মসজিদে নববীর ঈদের জামাতে অংশ নেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার মুসল্লি। মদিনায় অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিও এই ঈদের জামাতে নামাজ পড়েন।
এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫ জুন উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো মুসলমানদের অন্যতম প্রধান উৎসব পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। স্থানীয় সময় সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে দুবাই ঈদগাহ ময়দানে ঈদ-উল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মুসল্লিরা ফজরের নামাজ পড়েই ঈদগাহে জমায়েত হতে থাকেন। সূর্য ওঠার আগেই ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেখানে বেশিরভাগ মুসল্লিই বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয়। ঈদের নামাজের পর বাংলাদেশি মুসলমান কমিউনিটি যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনটিকে নানান বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছেন। আমিরাতে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।মধ্যপ্রাচ্যের সংগে মিল রেখে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় পবিত্র ঈদ-উল- ফিতর উদযাপিত হয়েছে শুক্রবার। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীরাও এই ঈদ উৎসবে শরিক হয়েছেন। শুক্রবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নেগারায় সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। নামাজ শুরুর আগে বয়ান পেশ করেন খতিব তানশ্রী শাইখ ইসমাইল মোহাম্মদ। এছাড়া হাংতোয়া মসজিদ আল বোখারি, মসজিদ জামেক, তিতিওয়াংসা বায়তুল মোকাররম, কোতারায়া বাংলা মসজিদ, ছুবাংজায়া বাংলা মসজিদ, ক্লাং, পেনাং, ছুংগাই ভুলু, সেলায়েং পাছার পুচং, মালাক্কা, জোহর বারুতেও ঈদের নামাজ আদায় করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নামাজ শেষ হওয়ার সংগে সংগে কোতারায়া বাংলা মার্কেটে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে জড়ো হতে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সকাল ১০ টার মধ্যে কোতারায়া বাংলা মার্কেট হয়ে ওঠে বাঙালিদের মিলন মেলায়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার ফ্রান্সেও উদযাপিত হলো পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ উপলক্ষে ফ্রান্সের প্যারিসে বাংলাদেশিদের ব্যবস্থাপনায় পৃথক তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্যারিসের ইস্তাসহ বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে সকাল সাড়ে সাতটা, সাড়ে আটটা ও দশটায় মোট তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ওভারভিলিয়েসহ বাংলাদেশ জামে মসজিদ ফ্রান্সে সকাল ছয়টা থেকে এগারটা পর্যন্ত মোট সাতটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মেট্রো হোশের লাপোস্টের পেছনে সকাল ৯টায় একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ফ্রান্সের জাতীয় মসজিদ গ্র্যান্ড মসজিদে সকাল ৯টায় একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল মসজিদে দলমত-নির্বিশেষে বাংলাদেশি ছাড়াও স্থানীয় ও বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন।
ইউরোপের ঐতিহাসিক দেশ ভিয়েনায় যথাযথ ধমীয় ভাব-গাম্ভীর্য এবং ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেছেন ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশি প্রবাসীরা। সকাল ৮ টায় ভিয়েনাস্থ বায়তুল মোকারম জামে মসজিদে প্রথম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাত পরিচালনা করেন মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব শাইখ ড. ফারুক আল মাদানী। ভিয়েনাতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টারে। সেখানে ঈদের ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ভিয়েনাতে বিভিন্ন মসজিদে প্রচুর সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পর্তুগালেও উদযাপিত হচ্ছে ঈদ-উল- ফিতর। পর্তুগালের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ঈদ উদযাপন করছেন। স্থানীয় সময় সকাল ৮ টায় লিসবনের মার্তৃম-মুনিজ পার্কে অনুষ্ঠিত হয় সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত।
এছাড়াও পর্তুগালের সেন্ট্রাল মসজিদ লিসবনে ঈদ জামাতে অংশ নেন পর্তুগালে বসবাসরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ঈদ উদযাপন কমিটি লিসবন পর্তুগালের আয়োজনে ঈদুল ফিতরের জামাতে শরিক হতে শহরের বিভিন্ন জোন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও ছুটে আসেন পর্তুগালে বসবাসরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। নামাজ শুরুর আগে বয়ান করেন মার্তৃম-মুনিজ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইব্রাহিম মোল্লা ও নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ লিসবনের খতিব মাওলানা আবু সাঈদ।এদিকে, পর্তুগালস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রুহুল আলম সিদ্দিকী ঈদ জামাতে অংশ নিয়ে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লিসবন ছাড়াও পর্তুগালের পর্তো, আলগ্রাভসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষ হওয়ার সংগে সংগে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র লিসবনের মার্তৃম মুনিজ বেনফরমসো সড়কে জড়ো হতে থাকেন সবাই। ঈদকে কেন্দ্র করে পর্তুগালের বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোতে নানান খাবার ও মিষ্টান্নভোজনের আয়োজন করা হয়েছে।