নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখান থেকে তিনি ইউটার্ন নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেকার যুবকদের ন্যায়সঙ্গত কোটা সংস্কারের আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী বললেন- কোনো কোটাই থাকবে না। এখন বলছেন, হাইকোর্টের রায়ের বাইরে যাওয়া যাবে না। আদালত কি বলেছে? যা বলেছে কোটা নিয়ে সেটা রায় নয়, পর্যবেক্ষণ। এই কথাটা আমরা অনেকেই বলছি না।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনী যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হলো সেখান থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা আপনি রাখলেন। যেটা আপনার সুবিধা যেটাতে আদালতকে ব্যবহার করছেন আর যেটায় অসুবিধা সেখানে আদালতকে ব্যবহার করছেন না।’
‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোটা এবং খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো রাজনীতি করছি না। যেটা সত্য আমরা সেটা জনগণের কাছে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তুলে ধরছি’, বলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নোংরা রাজনীতি করছে বলে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কথা বলে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। তাকে তার ন্যূনতম আইনি সুযোগ থেকে বঞ্ছিত করা হয়েছে। মূল মামলায় জামিন পেলেও এখন একটার পর একটা মিথ্যা মামলাকে সামনে এনে মুক্তিকে বিলম্ব করছে। তারা তাকে ততদিন পর্যন্ত কারাগারে রাখতে চায় যতদিন পর্যন্ত তাদের অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণ না হয়।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যিনি কোনোদিন কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি তাকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। তার চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আর আমরা চিকিৎসার কথা বললেই তারা বলে সব ঠিক আছে। আবার বলে কারাবিধিতে নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’
‘দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিচ্ছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে অনিয়ম প্রমাণ করেছে সরকার দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কোন পর্যায়ে এরা (সরকার) চলে গেছে। আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনা উঠে এসেছে যে, ভল্টের মধ্যে সোনার বদলে ধাতব মুদ্রা রাখা হয়েছে, সেখানে অর্নামেন্টগুলো বদলে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে নকল জিনিসপত্র রাখা হয়েছে।’
‘এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বহু টাকা হ্যাকিং করে নিয়ে চলে গেলো তার প্রতিবেদনটা আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। কারণ, অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের হাত নাকি অনেক লম্বা …। বাংলাদেশকে আপনারা অর্থনীতির দিক থেকে সম্পূর্ণ ফোকলা করে দিয়েছেন, মাইক্রো ইকোনোমি সিস্টেমকে আপনারা শেষ করে দিয়েছেন।’
‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর’
দেশের মানবাধিকার ও বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া সম্প্রতিক বক্তব্যকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হাস্যকর একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন। আপনারা বলছেন যে, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয় না। এটা শুনে তো মানুষ হাসবে।’
‘নির্বাচনের নামে তামাশা চলছে’
নির্বাচনের নামে এই সরকার তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে বুলবুলের (ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল) মিটিংয়ে বোমা মারলো। তারপর সাথে সাথে সংবাদ সম্মেলন করে তারা (ক্ষমতাসীন দল) বলছে, এটা আমরা মারিনি। এটা প্রমাণ করে যে, আপনারাই মেরেছেন।’
‘দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা আর নেই। এটা এখন খেলা খেলা, তামাশা চলছে। তারপরও আমরা তামাশায় যাচ্ছি। জনগণ চায় যে আমরা যাই, জনগণ চায় যে তাদেরকে আমরা উন্মোচিত করি। এটা মনে রাখতে হবে এই যাওয়াটাই স্থায়ী নয়।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। একটি মাত্র ইস্যুতে আমরা ঐক্য চাই- বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যা দিয়ে জনগণ পরবর্তী সরকার গঠন করবে এবং সংকটের সমাধান হবে।’
দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, বিএনপির প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান, সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী।