ক্রীড়া প্রতিবেদক: পাঁচবার ফাইনাল খেলেও একবার শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশের। আজ ষষ্ঠবারের মতো যেকোনো ফরম্যাট, যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে নামছে বাংলাদেশ।
ফাইনাল জুজু আজ কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। ভাগ্য ফিরবে ছয়ে। এমনটাই বিশ্বাস সবার। এ বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছেন ক্রিকেটাররাই। পরপর দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে যেভাবে হারিয়েছে, সেই আত্মবিশ্বাসে অনেক আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। মাঠের আবেগ, উত্তেজনা সামলে নিতে পারলে দুবাইয়ে ইতিহাস গড়ার হাতছানি মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের।
কেমন ছিল এর আগের পাঁচ ফাইনাল। উত্তর খুঁজেছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ
এর আগের পাঁচ ফাইনাল
২০০৯ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। পুরো আসরে দারুণ খেলে বাংলাদেশ খেলেছিল ফাইনালে। কিন্তু ফাইনালে বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙে যায় ২ উইকেটের হারে। মিরপুরে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ১৫২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। রকিবুল হাসান সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছিলেন। ব্যাটসম্যানরা সেদিন দায়িত্ব নিতে না পারলেও বোলাররা এগিয়ে এসেছিলেন। শ্রীলঙ্কা মাত্র ৫ রান তুলতেই হারিয়েছিল ৬ উইকেট। তাতেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু কুমার সাঙ্গাকারার ৫৯ ও পারভেজ মারুফের ৩৮ রানে শ্রীলঙ্কা জয় পায় সহজেই। তবে শেষ আঘাতটি করেছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ১৬ বলে ৩৩ রান করে দলে দেন ট্রফির স্বাদ।
তিন বছর পর বাংলাদেশ ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয় ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে আতিথেয়তা দেয় বাংলাদেশ। ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে বাংলাদেশ খেলেছিল ফাইনাল। কিন্তু মাত্র ২ রানে ভাঙে বাংলাদেশের শিরোপার স্বপ্ন। পাকিস্তান আগে ব্যাটিং করে ২৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তামিমের ৬০, সাকিবের ৬৮ রানে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝে পথ হারিয়ে ম্যাচ কঠিন করে ফেলে স্বাগতিকরা। শেষ ওভারে ৯ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ তুলতে পারেন মাত্র ৭ রান। ২ রানে হারে বাংলাদেশ। ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ কিন্তু ওই ২ রানের আক্ষেপ আজও ভুলতে পারেননি।
চার বছর পর আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চে বাংলাদেশ। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। ওয়ানডে নয় এবার ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি। ফরম্যাট পাল্টালেও পাল্টায়নি বাংলাদেশের ভাগ্য। সহজে ফাইনাল হারলেও বাংলাদেশ পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছিল। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ১৫ ওভারে ১২০ রান তুলে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ঝড় তুলে ১৩ বলে করেছিলেন ৩৩ রান। কিন্তু ১৩.৫ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে মাহেন্দ্র সিং ধোনির দল তুলে নেয় জয়। দুঃস্বপ্নের আরেকটি রাত কাটায় বাংলাদেশ।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও পাল্টায়নি ফাইনাল ভাগ্য। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ সবার আগে পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে। কিন্তু ফাইনাল জুজু কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৯ রানের বিশাল হারের ক্ষত এখনও তরাতাজা টাইগার শিবিরে। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২২১ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ১৪২ রান। সেই মাহমুদউল্লাহ আবারও এগিয়ে এসেছিলেন। ব্যাট হাতে করেছিলেন ৭৬ রান। কিন্তু তাকে সমর্থন দিতে পারেনি কেউ।
১৮ মার্চ আরেকটি দুঃস্বপ্নের রাত কাটায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ডেরায় ঢুকে ওদের দুবার হারিয়ে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। জয়ের সব আয়োজন হয়ে গিয়েছিল। শেষ ১২ বলে ভারতের লাগত ৩২ রান। ১৯তম ওভারে রুবেল খরচ করে আসেন ২২ রান। তাতেই সব ওলটপালট। শেষ ওভারে ১০ রান ডিফেন্ড করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ করেন দিনেশ কার্তিক। অথচ পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ফাইনালেও ভারতকে কড়া জবাব দিচ্ছিল সাকিবের দল। কিন্তু শেষ চাপ সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ।
তিন এশিয়ার পরাশক্তির কাছে পাঁচবার ফাইনাল হারার পর স্বাভাবিকভাবেই একটা বড় প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি ফাইনাল জিততে পারবে না?
আজ সেই উত্তর, সেই অপেক্ষা ঘুচানোর পালা। ছয় নম্বর ফাইনালে এসে কাটবে ফাইনাল জুজু। ‘চ্যাম্পিয়ন’ লিখা বোর্ডের সামনে গগনবিদারী চিৎকারের অভিজ্ঞতা পেতে চায় বাংলাদেশও। মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহরা ছুঁতে যায় রূপালি ট্রফিও। আজই কি সেই দিন, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের! দুবাইয়ে নতুন করে লেখা হবে বাংলাদেশের জয়গান।