মোঃ ছাবির উদ্দিন রাজু: সাম্প্রতিক রাজধানী ঢাকা, বানিজ্যবন্দর চট্টগ্রাম’সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে। কয়েকদিন পর পরই পত্রিকার পাতায় উঠে আসছে কিশোর গ্যাং দ্বারা মারামারি ও খুনের ঘটনা। যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত। আর এই কিশোর গ্যাং নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনের তথ্যগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে একটি পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছে বার্তাকাল ডটকম। কিভাবে গড়ে উঠছে এসব কিশোর গ্যাং, সেসব তথ্যই উঠে এসেছে বার্তাকাল ডটকম এর এই প্রতিবেদনে। কিশোর গ্যাং শুরু হয় মূলত অন্যদের হামলা থেকে নিজেদের প্রটেক্ট করার জন্যই। দেখা যায় একটি এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়লে, আর সেই অপরাধের সঠিক বিচার না পেলে তখন ভুক্তভোগীর মধ্যে মনে মনে এক ধরনের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং নিজেকে প্রটেক্ট করতে একধরনের পরিকল্পনা শুরু হয়। ফলে সেই ভুক্তভোগী কয়েকজন বন্ধু মিলে নিজেদের নিরাপত্তা, ব্যক্তি স্বাধীনতা বা বিনোদনের গন্ডি হিসেবে একটা গ্রুপ তৈরি করে। পরে দেখা যায় সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, মানুষের প্রতি অবিচার’সহ বিভিন্ন কারণে এসব গ্রুপ ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাং এ পরিণত হয়ে যায়। পরে সময়ের ব্যবধানে সেসব গ্রুপ বেশ বড়সড় কিশোর গ্যাং হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন সেই কিশোর গ্যাং একটা ট্রেন্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে বেপরোয়া হয়ে উঠে। এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখাতে, গুন্ডামি করতে, আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু হয় কিশোর গ্যাং এর প্রতিযোগিতা। একটি কিশোর গ্যাং এর আধিপত্য বা দাপট দেখে আরেকটি কিশোর গ্যাং তৈরি হয়। দেখা যায় একই গ্রুপের দুইজনের মতপার্থক্যেও গড়ে উঠে আলাদা আলাদা কিশোর গ্যাং। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলে মত বিরোধ, ভয়ংকর রেশারেশি, মারামারি, খুনোখুনি। কিশোর গ্যাংগুলো নিজেদের ক্ষমতার আধিপত্য দেখাতে মটর সাইকেল মহরা দেয়। দেখা যায় এক সাথে অনেকগুলো মটর সাইকেল নিয়ে তারা একসঙ্গে মুভ করে। নিজেদের শক্তি ও ঐক্যবদ্ধতা জানান দিতেই এমনটা করে তারা। আর এই ভাবেই গ্যাং তৈরি হওয়ার পর খুব দ্রুতই অন্য এলাকার গ্রুপগুলোর সঙ্গে কিংবা নিজেদের বিপক্ষ গ্রুপের সাথে অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েও সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। অনেক সময় তুচ্ছ কারণেও ঘটে মারামারি বা খুনোখুনির ঘটনা। কেউ কাউকে গালি দিলে, ‘যথাযথ সম্মান’ না দেখালে, অর্থের লেনদেন, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও মারামারির ঘটনা ঘটে। মেয়েলি বিষয় এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থেকেও অসংখ্য মারামারি হয়। এরপর কিশোর গ্যাং এর শক্তি বাড়াতে গিয়ে এক সময় আর্মস ক্যারি (অস্ত্র বহণ) করা বা ব্যবহার করা শুরু হয়। গ্রুপে অস্ত্র আসার কিছুদিনের মধ্যেই তার সঙ্গে মাদকও ঢুকে পড়ে। তখনও কিশোর গ্যাংগুলো হয়ে উঠে আরো ভয়ংকর। তাদের মধ্যে নেশার টাকা জোগাড় করতে একটা সময় লোভ চলে আসে। অনেকে আবার এসব গ্যাং গ্রুপটাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আদায়ের ধান্দা শুরু করে। শুরু হয় ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল এর মত কার্যকলাপ। আর সেসব চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে চলে নেশা করা, জুয়া খেলা ও ব্যাপক বিলাসিতা। ফলে সমাজে এসব কিশোর গ্যাং এর জন্য অপরাধ বেড়ে যায়, অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয় জনজীবনে। সাধারণ মানুষ তখন আতংকিত হয়ে পড়ে, সামাজিক অবক্ষয় তখন চরমে গিয়ে পৌঁছে। মূলত বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান, অভিভাবকহীন সন্তান, অল্প বয়সে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার দেখানো স্বপ্নে বিভোর স্কুল পড়ুয়া বা কলেজ পড়ুয়া ছেলেগুলোই মজার ছলে এসব গ্রুপ তৈরি করে। পরে এসব গ্রুপ একসময় মাদক, অস্ত্র, মারামারি, এমনকি খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে কিশোর গ্যাং এ পরিণত হয়। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে মূলতঃ তিনটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে। প্রথমতঃ মাদকের সহজলভ্যতা, অস্ত্রের দাপট, আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাব, ইন্টারনেটের অবাধ স্বাধীনতা’সহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি। দ্বিতীয়তঃ বর্তমান শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। রয়েছে সঠিক বিনোদনের অভাব। সঠিক পারিবারিক শাসন-অনুশাসনের ঘাটতি। তৃতীয়তঃ কিশোর বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ ও সিনিয়রদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে নিজেকে অল্প বয়সে ক্ষমতাবান করার লোভ। অল্প বয়সে নিজেকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রয়েছে একাদিক কিশোর গ্যাং,বাড়ছে খুন,গুম,চুরি,ডাকাতি, ছিন্তাই,রাখাজানি সহ অনেক অনৈতিক কাজ। তাই যদি কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ করতে হয়, তাহলে সামাজিক ভাবে ঐ উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে প্রতিকারে জোর দিতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এই গ্যাং কালচারে হারিয়ে যাবে ধ্বংসের অতল গহ্বরে।
Related Articles
ভৈরবে সড়ক দূর্ঘটনায় বিএনপি নেতার ছেলের ইন্তেকাল
সোহেলুর রহমান বিশেষ প্রতিনিধি: ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা রিয়াজ আহমেদ মারুকী শাহীন এর ছেলে নূর মোহাম্মদ আফ্রিদি ফোয়াদ( ২৪) গত ১ লা ডিসেম্বর বুধবার ভৈরব কিশোরগঞ্জ সড়কের আকবর নগর এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে আজ শনিবার সকাল ৮-২০ মিনিটে […]
দুপুরের ঘুম কতোটা জরুরি?
এ. আর. মুশফিক : অলস দুপুরে বিছানায় একটু গা এলিয়ে ঘুমাতে চান অনেকেই। দুপুরের খাবার সেরে আলস্য পেয়ে বসে শরীরে। কিন্তু এখন যান্ত্রিক জীবনে কাজের চাপে ওই সুযোগটা আর তেমন পাওয়া যায় কি? অনেকে বলেন, দুপুরে ঘুমানো শরীরের জন্য ভালো না। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, দুপুরে পরিমিত বিশ্রাম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার সাইকোলজির প্রফেসর […]
ভৈরবে এডিশনাল ডিআইজি আপেল মাহমুদ এর জন্মদিন পালিত
মোঃ ছাবির উদ্দিন রাজু ভৈরব কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আজ ৩১ জানুয়ারি বাদ মাগরিব অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে নাজমুল হাসান পাপন পৌর পার্কে এসএসসি ৯৪ ব্যাচ এর উদ্যোগে এডিশনাল ডিআইজি আপেল মাহমুদ এর জন্মদিন পালন করেন, এসএসসি ৯৪ ব্যাচের বন্ধুরা তাদের বক্তব্যে ছাত্রজীবনের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন, বন্ধুরা বলেন জনবান্ধব মানবিক পুলিশ অফিসার,একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অতিরিক্তডিআইজি আপেল […]