ক্রিকেট খেলা রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮

আবারো হতাশ করল বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক : শেষ ওভারের জুজু আজও জেকে বসেছিল বাংলাদেশের উপর। কেন জানি জয়টা শেষ ওভারে অধিকাংশ সময়ই অধরাই থেকে যায়। হাতে ঢের উইকেট। বল থেকে রানের পার্থক্য সামান্য বেশি। অথচ এইসব ক্ষেত্রে লেজে-গোবরে অবস্থা করে ফেলে বাংলাদেশ।

মোটা দাগে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে ২ রানে হার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে শেষ ওভারে ১ রানে হার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে ৯ রান না করতে পেরে হার। এগুলো বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত হয়ে আছে। এগুলোর সমান না হলেও তার কাছাকাছি হিসেবে আরো একটি ক্ষত আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপহার দিল টাইগাররা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় নিশ্চিত করতে শেষ ৭ বলে ৮ রান প্রয়োজন। হাতে ছয়-ছয়টি উইকেট। ক্রিজে আছেন সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান। ৪৯তম ওভারের শেষ বল। কিমো পল ফুলটস দিলেন। সেই ফাঁদে পা দিলেন সাব্বির রহমান। হাঁটু গেড়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শিমরন হেটমায়ারের হাতে ক্যাচ দেন সাব্বির। তবুও আশাবাদী ছিল বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্ত। কারণ, ক্রিজে আছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। যিনি ৬৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৬৮ রানে অপরাজিত। অন্তত মুশফিক ম্যাচটি ফিনিশ করে আসবেন।

শেষ ওভারের আগে বেশ সময় নিয়ে ফিল্ডিং সাজালেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার। যেন আড়ম্বরপূর্ণ রণ প্রস্তুতি নিলেন। ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা হোল্ডার হেলে-দুলে দৌড়ে গিয়ে ফুলটস দিলেন। মওকা পাওয়ার মতো মুশফিকও সজোরো হাঁকালেন। ছক্কা মেরে টানটান উত্তেজনার মধ্যে পানি ঢেলে দিবেন। বুকের উপর চেপে বসা ৬ বলে ৮ রানের জগদ্দল পাথরটি সরিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। বাঁচা আর হল কই? সেই ডিপ মিড-উইকেট অঞ্চলেই কিমো পলের হাতে ধরা পড়লেন মুশফিক। যেন দুই বছর আগে বেঙ্গালুরুতে ঘটে যাওয়া নাটকের পুর্নমঞ্চয়ান হচ্ছে।

অবশ্য মুশফিক ভেবেছিলেন বলটি হাইট ‘নো’ হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। সজোরে হাঁকাতে গিয়ে মুশফিক কিছুটা নিচু হয়েছিলেন। সে কারণে ডেলিভারিটি লিগাল হিসেবেই গণ্য হয়। শেষ ৫ বলে জয়ের জন্য দরকার ৮ রান। ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। হোল্ডারের করা দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মোসাদ্দেক কোনো রান নিতে পারেননি। তাতে ৩ বলে জিততে ৮ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। চতুর্থ বলে ২ ও পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে ব্যবধান কমান মোসাদ্দেক। তাতে শেষ বলে জিততে ছয় রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। স্ট্রাইকে ছিলেন মাশরাফি। হোল্ডারের ফুলার লেন্থের ডেলিভারি লংঅনে চলে গেলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি মাশরাফি। তাতে ৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। আক্ষেপ হয়ে ধরা দেয় আরো একটি হার।

তার আগে ২৭২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এনামুল হকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২.২ ওভারেই ৩২ রান তুলে ফেলেছিল সফরকারীরা। এনামুল ৯ বল খেলে ২ চার ও সমান সংখ্যক ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হন। এরপর আগের ম্যাচের মতো দলের হাল ধরেন সাকিব ও তামিম। তারা দুজন দ্বিতীয় উইকেটে ৯৭ রান তোলেন। ২৫ ওভারের মাথায় দলীয় ১২৯ রানে তামিম ইকবাল দেবেন্দ্র বিষুর বলে শাই হোপের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। যাওয়ার আগে ৮৫ বল খেলে ৬ চারে ৫৪ রান করে যান। তামিমের বিদায়ের অল্প কিছুক্ষণ পর সাকিবও বিদায় নেন। ১৪৫ রানের মাথায় অ্যাশলে নার্সের বলে কিমো পলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সাকিব। ৭২ বল খেলে ৫ চারে ৫৬ রান করে যান তিনি।

এরপর মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চতুর্থ উইকেটে ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কক্ষপথেই রাখেন। দলীয় ২৩২ রানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩৯ রান করে আউট হয়ে যান। মুশফিক ও সাব্বির দলীয় সংগ্রহকে ২৬৪ রান পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েও জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। ফিনিশারের অভাবে ও একই ভুল বার বার করে আবারো হারের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করে খেলে শেষ ৭ বলে হেরে গেল টাইগাররা। এই আক্ষেপে আর কত পুড়বে সমর্থকরা?

তার আগে শিমরন হেটমায়ারের ৯৩ বলে ৩ চার ও ৭ ছক্কায় করা ১২৯, রভম্যান পাওয়েলের ৪৪, ক্রিস গেইলের ২৯ ও শাই হোপের ২৫ রানে ভর করে ৪৯.৩ ওভারে ২৭১ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে বাংলাদেশের রুবেল হোসেন ৩টি, সাকিব আল হাসান ও মু্স্তাফিজুর রহমান ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

ম্যাচসেরা হন শিমরন হেটমায়ার। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এখন ১-১ এ সমতা বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *