সমাধান ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বাসভবনে যারা হামলা চালানোর অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই কোটা বহাল রাখতে হাই কোর্টের রায় রয়েছে। রায় অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোটা, তাতে হাই কোর্টের রায় রয়ে গেছে। যেখানে হাই কোর্টের রায় আছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে আমরা কীভাবে কোর্টের ওই রায় ভায়োলেট করব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কোটা ‘বাতিলে’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘোষণা’ অনুযায়ী কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।
যদিও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১১ এপ্রিল সংসদে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বারবার এই আন্দোলন.. ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল কোটা পদ্ধতি বাতিল।’
আজ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওই বক্তব্যের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি তো বলেছিলাম টোটাল কোটা পদ্ধতি বাদ দিতে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় রয়েছে। এই রায় অবমাননা করলে তো আমি কনটেম্পট অব কোর্টে পড়ে যাব। আমি তো সেটি করতে পারি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার ঘটনায় আন্দোলনকারী কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মুক্তি দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হলেও এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব দেখান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “ক্যামেরা দেখে একটা একটা করে খুঁজে বের করা হচ্ছে। ভিসির বাড়িতে যারা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে, আক্রমণ করেছে, তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করছে।
“যত আন্দোলনই হোক না কেন এদের ছাড়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কারণ এরা লেখাপড়া শিখতে আসেনি।”
সংসদে এদিনের অধিবেশনে কোটা আন্দোলনকারীদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন ছেলেপুলে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাড়ি ভাংচুর করা, বেডরুম পর্যন্ত পৌছে ভাংচুর এবং লুটপাট করা, আলমারি ভেঙে গহনাঘাটি, টাকাপয়সা সব কিছু লুটপাট করেছে। ভিসির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচিয়েছে।