জয়নাল আবেদীন রিটন, বিশেষ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দিন দিন বায়োফ্লক্স পদ্ধতিতে টাঙ্কির (খাঁচা) মধ্যে মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে যুবকদের মাঝে। বাড়ির ওঠানে আবার কেউ বসত ঘরের ভিতরেও বায়োফ্লক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। পুকুরে মাছ চাষের চেয়ে বায়োফ।রক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষ অনেক লাভজনক হওয়ায় শহরের শম্ভুপর এলাকায় এর বিস্তার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ওই এলাকার যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভৈরবের শম্ভুপুর গ্রামে রায়হান নামে এক যুবক গত এগার মাস পুর্বে দেড় লাখ টাকা খরছ করে বাড়ির ওঠানে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে চারটি ট্যাঙ্কির (খাঁচা) মধ্যে দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে চারটি ট্যাঙ্কি তৈরি করে স্থানীয় জাতের শিং, কৈ, মাগুর, পাবদা, তেলাপিয়া ও গুলশা জাতের মাছ চাষ করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন ইতিমধ্যেই । রায়হান দেড় মাস পুর্বে দেড় লাখ টাকা খরছ করে চারটি টাঙ্কি তৈরি করেছেন। টাঙ্কি তৈরি শেষ হলে প্রত্যেকটিতে সাত হাজার করে চারটি টাঙ্কিতে মোট আটাশ হাজার মাছের পোনা ছাড়েন। এতে খরছ হয় তার মোট এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা । এগার মাসের মধ্যে চার মাস পর পর দুবারে অর্থাৎ আট মাসে সে মাছ বিক্রি করেছে তিন লক্ষ নব্বই হাজার টাকা। বায়োফ্লক্স পদ্দতিতে মাছ চাষে অল্প দিনে বিরাট লাভবানি হয়েছেন। মোটা অংকের টাকা লাভ হওয়ার কারণ হলো হল মাছকে তেমন একটা খাবার দিতে হয়না। প্রাথমিক অবস্থায় মাছকে যে খাবারটা দেয়া হয় সেটা মাছের বর্জ্যে পরিনত হয়ে ভেক্টেরিয়ার মাধ্যমে ফ্লগে পরিনত হয়। সে ফ্লগগুলো আবার মাছে খেয়ে থাকে। যার ফলে পুকুরের মাছ চাষে তুলনায় বায়োফ্লক্সে মাছের খাবার অনেক কম লাগে। এ কারণে অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে। বায়োফ্লক্সে কম খরচে দেশীয় জাতের মাছ চাষের পরামর্শ নিতে উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকেই যাচ্ছেন যুবক মাছ চাষী রায়হানের কাছে।
মাছচাষী রায়হান বলেন, এ পদ্ধতিতে বেশি লাভেল কারণ হলো মাছ যে বর্জ্য দেয় সেগুলো আবার মাছের খাবার তৈরি হয়। ফলে মাছের খাবার বেশি দিতে হয়না। পুকুরে মাছের জন্য দুই কেজি খাবার দিয়ে এক কেজি মাছ পাওয়া যায়। এখঅনে আমরা ছয় থেকে সাতশত গ্রাম খাবার দিয়ে এক দেড় কেজি মাছ পাই। কারণ এখানে আমরা একটা ভিক্টরিয়া ব্যাবহার করি টোকে প্রভাটিক বলে। ঐটার মাদ্যমে মাছে যে বর্জ্যটা ছাড়ে সেটা থেকে মাছের খাবার তৈরি হয়। প্রতি এক লিটার পানিতে একটা মাছের জন্য প্রয়োজন। এ ভাবে এক হাজার লিটার পানিতে একহাজার পোনা মাছ ছাড়া হয়।
অপর চাষী জব্বর মিয়া বলেন, আমার পাশ্ববর্তী রায়হান ভাইয়ের মাছের চাষ দেখে আমিও এ পদ্ধতিতে মাছ শুরু করেছি। কারণ এ পদ্ধতিতে লাভ বেশি। আমি আগে পুকুরে মাছের চাষ করতাম। সেখানে মাছ বিক্রির উপযোগি হতে অনেক সময় লাগে আর খরচও বেশি। তাই পুকুরে মাছ চাষের পরিবর্তে এখন বায়েঅফ্লক্সের মাধমৈ মাছ চাষ শুরু করেছি।
মাছ চাষে আগ্রহী ফয়জুল্লাহ ফয়েজ বলেন, আমি আগে একটা চাকুরি করতাম। আমাদের এলাকায় বায়োফ্লক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে আমিও রায়হান ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি মাছ চাষ করতে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে বেশি জায়গা লাগেনা। অল্প যায়গায় যেমন বাড়ির উঠানে, বাসাবাড়ির ছাদে এমনকি নিজ বসত ঘরেও এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা সম্ভব।
মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, অঅমার বাড়িতে তেমন বেশি জায়গা নেই। এটা অনেক লাভ জনক। তাই আমি আমার বসত ঘরের কিছুটা অংশ একটা টাঙ্কি তৈরি করে তাতে মাছ চাষ করছি। নিজেরাও খেতে পারছি আবার বাজারে বিক্রি করে টাকার চাহিদাও পুরন করছি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট এস এম মনিরুজ্জামান , আমরা জলাশয়ের উপর জোড় দিইনা। আমরা বাড়ির আশেপাশে, বাড়ির আঙ্গিনায় বা বাসাবাড়ির ছাদে টেঙ্কের মধ্যে বায়োফ্লক্সের মাধ্যমে আমাদের যে বায়োলজি কন্ট্রোল করে আমরা মাছকে যে খাদ্যটা প্রদান করে থাকি সেটা থেকে যে উিেচ্ছষ্ট অংশ রিফাইং হয়ে আবার মাছের খাদ্যে পরিনত হয়। ফলে মাছ ঐ খাবারটা খেয়ে থাকে বলে চাষীদের মাছকে বেশি খাবার দিতে হয়না। বায়োফ্লকের মাধ্যমে আমরা এখন শিং কৈ পাবদা , গুলশা , মাগুর মাছ সব মাছই চাষ করতেছি। আমরা ইতিমধ্যেই সিনিয়র মৎস কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি বায়োফ্লকের প্রস্তাব প্রেরণ করার জন্য। যাতে আমরা এ প্রকল্পের অনুদান হিসেবে আমরা ফিফটি পার্সেন্ট অনুদান প্রদান করে যাতে বায়োফ্লক্সের সফলতা আনতে পারি।