দেশজুড়ে

মুরাদনগরে যেখানে সেখানে পশু জবাই, নেই ছাড়পত্রর বালাই

প্রায় ৪৭টি স্থানে কোন প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই জবাই হচ্ছে পশু।
প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় মূল্য নির্ধারণ করেন কসাই নিজেই।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিজেই জানেন না কয়টি স্থানে জবাই হয় পশু।

মোঃ নজরুল ইলাম, মুরাদনগর(কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই উপজেলা সদর সহ অন্যান্য হাটবাজারে অবাধে গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
একদিকে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা, অন্যদিকে জনসচেতনতার অভাবে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও উপজেলা সদর এলাকায় চলছে পশু জবাইসহ মাংস ক্রয়-বিক্রয়।
জবাই করা পশুর শরীরে কোনো রোগ-বালাই রয়েছে কিনা এমন কোনো ধারণাও রাখেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা।
আইন প্রয়োগের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ ও প্রশাসনের হলেও তাদের নেই কোনো তৎপরতা। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
উপজেলা সদর এলাকায় প্রতিদিন অন্তত ৮টি গরু এবং অন্তত ১৫টি ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। শুক্র ও সোমবার সদরের মুরাদনগর বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের দিনে বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। প্রতিটি গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
উপজেলা সদরের বাসিন্দা আবুল কালাম, মোজাম্মেল ও নহল চৌমুহনী বাজার এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, পশু অসুস্থ নাকি সুস্থ ছিল আমরা তাও জানি না। নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র এবং পশুর শরীরে সিল দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় লোকজন মারা যাওয়া পশুর মাংস, নাকি রোগাক্রান্ত গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ার মাংস খাচ্ছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই। তারা আরো বলেন, অন্যান্য বাজারে যখন গরু মাংস বিক্রয় হয় ৪শত ৫০টাকা। সেখানে উপজেলা সদর এলাকায় সব সময় গরু মাংস ওজনে কম দেয়াসহ বিক্রয় হয় ৬শত ৫০টাকা। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় হওয়ার পরেও তা দেখার কেউ নেই।
গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ছাড়পত্র আছে কি নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে মাংস ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, বেশিরভাগ গরু ভালো থাকায় ছাড়পত্র নেওয়া হয় না। আর মাংসের দাম স্যারেরা না আসার কারনে আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করে থাকি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথমতো পুরো উপজেলা জুড়ে পশু জবাইয়ের কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। আর প্রতিদিন পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মতো জনবলও আমাদের নেই। যদি পশু জবাইয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করা হয় তাহলে সঠিক নিয়মে পরিক্ষা করা সম্ভব।
মুরাদনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বলেন, পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরিক্ষা এটি প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কসাইদের মধ্যে সমন্নয় করে নেয়ার বিষয়। যদি নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই না করার কারনে পরিক্ষা করতে সমস্যা হয়। তাহলে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কসাইদের মধ্যে সমন্নয় করে জবাইয়ের একদিন পূর্বে পরিক্ষা করে ছাড়পত্র নিয়ে রাখতে পারে। আর পশুর মাংস বিক্রয়ের সময় বেশি মূল্য নিচ্ছে এই বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা খবর নিয়ে দেখছি যদি এমন কোন বিষয় থাকে তাহলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়া পশু জবাইয়ের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জেন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, আর পরিক্ষা ছাড়া যদি কোন অসুস্থ পশু জবাই করে তা বিক্রয় করে। তাহলে সেই পশুর মাংস মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। আমি যত দ্রæত সম্ভব জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সাথে কথা বলে এর একটা সমাধান করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *