অপরাধ

ভৈরবে অন্ধ নানীর ভিক্ষার জমানো টাকায় পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেল নাতি। 


পলাশ আহমেদ।।

গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের নিউটাউন এলাকা থেকে গোসল করার সময় মাদকের অজুহাতে নূর মোহাম্মদ জুয়েল (১৯) নামে
এক রিক্সা চালককে ধরে নিয়ে যায় ভৈরব থানার এএসআই মাজাহার।

অভিযুক্ত জুয়েলকে ধরে নিয়ে ভৈরব থানায় নয় বরং থানার পিছন দিয়ে গোপনে আটক করে রাখা হয় রান্না ঘরের ভিতর। পরে আটককৃত জুয়েলকে ছাড়িয়ে নিতে হলে স্বজনদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ওই এএসআই।

দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করা না হলে ৫২ পিচ ইয়াবা দিয়ে চালান করবে পুলিশ এমন হুমকি দেয় বলে এএসআই মাজাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ভোক্তভোগি রিক্সা চালক ক্যামেরার সামনে এ বক্তব্য দেন।

আটককৃতকে ছাড়িয়ে নিতে মা জরিনা বেগম ও অন্ধনানী জোসনা বেগম থানার পিছনে ওই এএসআইয়ের সাথে দেখা করে তাঁর হাতে পায়ে ধরেন জুয়েলকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু দারোগার দাবিকৃত টাকা না দিলে স্বজনদের সামনেও হুমকি দেয় ইয়াবা দিয়ে চালান করে দিবে। ভয়ে শেষ পর্যন্ত নিরপরাধ জুয়েলকে ছাড়িয়ে নিতে ১৩ হাজার টাকা দেয়ার জন্য রাজি হয় স্বজনরা।

রাত ৯টার দিকে অন্ধনানী জোসনা বেগম তার ভিক্ষার জমানো ৫ হাজার টাকা ও ঘরের জিনিস বিক্রি করে ১১ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং বাকী দুই হাজার টাকা পরের দিন দেয়ার কথা দিলে ছাড়া হয় জুয়েলকে,
পরেরদিন জুয়েলের মা জরিনা বেগম থানার সমানে বাকী ২ হাজার টাকা দেয় ওই দারোগার হাতে। এসব বিষয় থানার ওসি অবগত নয় বলেও জানান ভোক্তভোগি পরিবার।

এসব অপকর্মের বিষয়টি ভোক্তভোগিরা ঘটনার পরদিন বুধবার কয়েকজন স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকদের বিষযটি অবগত করেন। এ বিষয়ে ভোক্তভোগি জুয়েল, তার বাবা আক্কাছ মিয়া, মাতা জরিনা বেগম ও অন্ধনানী বৃদ্ধা জোসনা বেগম ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পরিবারটি বর্তমানে পুলিশি হয়রানির ভয়ে আতংকে রয়েছেন। ভৈরবের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিষয়টি মিমাংসা করবেন বলে ভোক্তভোগিদের জানালেও ভোক্তভোগি পরিবার ঘটনার সঠিক বিচারের দাবি করেন।

এবিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই মাজাহার বলেন, এটা তার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা। তবে ১৩ হাজার টাকা নয়, মাত্র ২ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। এবিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার না করার জন্য বিভিন্ন সাংবাদিকদেরকে অনুরোধ ও ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত এএসআই ।

এ বিষয়ে ভৈরব সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার রেজওয়ান দিপু এর সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, এমন ঘটনা আগেও শুনেছি। ঘটনার দিন ফোন দিলে হয়ত হাতে নাতে ধরতে পারতাম। আসামী আটক করে থানায় নিয়ে আসবে, অন্য কোথাও নিয়ে রাখার কোন নিয়ম নেই। যাচাই বাচাই করে ভাল হলে ছাড়া পাবে। তিনি ভৈরবের বাহিরে থাকায় এসে বিষয়টি দেখবেন এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবগত করবেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *