এ.আর. মুশফিক: গরমে সৌন্দর্য ধরে রাখা বেশ কঠিন একটা কাজ। রোদের অতিরিক্ত উত্তাপ আপনার ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ তৈরি করতে পারে, ত্বকের চামড়া ঝুলে যেতে পারে, ত্বকের রঙ নষ্ট হতে পারে এবং প্রখর রোদের কারণে চামড়া শক্ত হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রতিবেদনে বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হলো, যার মাধ্যমে আপনি গরমের অতিরিক্ত উত্তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারবেন এবং প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ত্বক এবং চুলের যত্নে করণীয় সম্পর্কে।
ত্বকের যত্ন
* ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা : ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা ত্বকের সুস্থতার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আপনি মনে করতে পারেন, শীতকাল চলে গেছে এখন আবার এসবের কি দরকার। ভুলে যাবেন না, শীত শেষ মানেই যে আপনার ত্বকের আর আর্দ্রতার দরকার নেই এমন কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ভাবার কোনো সুযোগ নেই। আপনার ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী আর্দ্রতা প্রদান করুন।
গরমের দিনে একটা সমস্যা হচ্ছে, অতিরিক্ত তাপের ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক। এই শুষ্ক ত্বক খুব সহজেই নিষ্প্রাণ হয়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরম পর্যায়ে। মেকআপ ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখুন। এর ফলে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ময়লা, ব্যাকটেরিয়া এবং সূর্যের দাবদাহ থেকে আপনার ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।
তেলবিহীন, পানি বা জেল এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রতিদিন তা আপনার ত্বকে ভালমতো লাগান।
* ত্বকের মৃতকোষ অপসারণ : ত্বকে কোনো ক্রিম বা লোশন সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ত্বক পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। সেজন্য ত্বকের মৃতকোষগুলো অপসারণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা মৃতকোষগুলো ত্বকের প্রয়োজনীয় ছিদ্র বন্ধ করে ত্বকের ওপর একটি শক্ত আবরণ তৈরি করে। মৃতকোষ অপসারণের ফলে মেকআপ বা অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের জন্য ত্বক উপযোগী হয়ে ওঠে। তবে মৃতকোষ অপসারণের জন্য বাড়িতে তৈরি প্রসাধনী এবং বাজারের প্রসাধনীর মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহার করা বেশি ফলপ্রদ।
খেয়াল রাখবেন, ত্বক থেকে মৃতকোষ অপসারণের ব্যাপারটা যেন প্রতিদিন না ঘটে। ত্বকে অতিরিক্ত ঘষামাজার ফলে ত্বক লাল হয়ে উঠতে পারে, ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে এবং ত্বক ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন স্ক্রাবিংয়ের মাধ্যমে ত্বক পরিষ্কার করুন। সূর্যের আলোতে বের হওয়ার আগে কখনো ত্বক স্ক্রাবিং করবেন না এবং পারলে এই কাজটি সন্ধ্যায় করুন।
* পর্যাপ্ত পানি পান : গরমের দিনে ত্বকের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই উপকারী একটি দিক। গরমের সময়ে একটি সমস্যা হচ্ছে, প্রচুর ঘাম হওয়ার ফলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। আপনার দেহের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য এবং পানিশূন্যতার ফলে যাতে দুর্বল হয়ে না পড়েন সেজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন এবং প্রচুর পরিমাণে ফলের রস ও পানিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
* সানস্ক্রিন ব্যবহার : ত্বকের সুরক্ষার জন্য রোদে বের হওয়ার আগে ত্বকে সানস্ক্রিন লাগিয়ে বের হোন। কথায় আছে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। সুতরাং ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আগেই সানস্ক্রিনের মাধ্যমে তা সুরক্ষিত রাখুন। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির ফলে ত্বকে শুষ্কতা, কালো ছটা এবং দাগ হয়ে যেতে পারে। এসপিএফ-৩০ উপাদানযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং কয়েক ঘণ্টা পরপর ব্যবহার করতে থাকুন।
* তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করা : আপনার ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ফেলে এমন কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে ত্বকের প্রদাহ, ইনফেকশন এবং ব্রণ হতে পারে। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য তেলবিহীন প্রসাধনী ব্যবহার করুন। কেননা ত্বকের ছিদ্রবন্ধকারী প্রসাধনীর ফলে আপনার ত্বকে মৃতকোষ এবং ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাছাড়া গরমের দিনে যখন আপনি প্রতিনিয়ত প্রচুর ঘামছেন, আপনি অবশ্যই চাইবেন না যে আপনার ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে গিয়ে তা আরো বেগতিক অবস্থা সৃষ্টি করুক।
* অ্যালোভেরা ব্যবহার : ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান রয়েছে অ্যালোভেরার মধ্যে। বিশেষত গরমের দিনে সূর্যের দাবদাহ থেকে ত্বকের সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি ত্বকে প্রশান্তি যোগানোর জন্য অ্যালোভেরা খুবই উপযোগী। অ্যালোভেরা ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে এবং ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করে। তাছাড়া ত্বকে প্রশান্তি যোগানোর পাশাপাশি ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়। অ্যালোভেরায় প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের ক্ষয়রোধ করে। গাছ থেকে অ্যালোভেরার তাজা পাতা নিয়ে পাতায় থাকা জেলি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করুন অথবা বাজারে অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করুন।
* স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন : বিভিন্ন রকমের ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খাবারের সংমিশ্রণে তৈরি একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার শরীরের পাশাপাশি ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন। বিশেষ করে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে এমন খাবার, যেমন বাদাম খেতে পারেন যা আপনার ত্বকে পুষ্টি যোগাবে।
চুলের যত্ন
* শ্যাম্পু ব্যবহার : গরমের দিনে প্রচুর ঘামের ফলে মাথার ত্বকেও প্রচুর ঘাম জমে। ফলে ধুলাবালি এবং ময়লা চুলের ত্বকে জমে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চুলের ত্বককে রক্ষা করতে ভালো মানের পরিষ্কারক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। অনেকেই আছেন যারা গরমের দিনে সুইমিংপুলে গোসল করেন। সুইমিপুলের পানিতে থাকা ক্লোরিন আপনার চুলকে খসখসে এবং শুষ্ক করে তুলতে পারে। সেকারণে ভালো মানের একটি শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন নিয়মিত।
* কন্ডিশনার ব্যবহার : গরমের তাপ এবং স্যাঁতসেঁতে ভাব চুলের গঠন এবং বৃদ্ধির ক্ষতিসাধন করে থাকে। তাছাড়া চুল শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং চুলে জমাট বেঁধে যায়। কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে চুল প্রাণ ফিরে পায় এবং প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ধরে রাখে।
সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে চুলে উষ্ণ নারকেল তেল লাগানো। এক কাপ পরিমাণ উষ্ণ নারকেল তেল আপনার চুল এবং চুলের ত্বকে ভালোমতো মালিশ করুন। তারপর উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে অন্তত এক ঘণ্টা চুল মুড়িয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুল হয়ে উঠবে নরম এবং পুষ্টিযুক্ত।
তথ্যসূত্র : স্টাইল ক্রেজ