সমাধান ডেস্ক: মু্স্তাফিজের বলটা দেখেশুনে ব্যাটে লাগিয়ে কাভারে পাঠালেন আশলে নার্স। বলটা গেল মাশরাফির খুব কাছে। ছেড়ে দিলেন অধিনায়ক। ওই বল ধরেও কোনো লাভ নেই! দৌড়ে রান নেওয়ার কোনো তাড়া নেই নার্সের। অপরপ্রান্তে বসে পড়লেন রভম্যান পাওয়েল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩০২ রানের লক্ষ্য দিয়ে ততক্ষণে ১৮ রানের জয় নিশ্চিত বাংলাদেশের।
মাশরাফির কন্ঠে তখন গগন বিদারী চিৎকার। হাঁটু ভেঙে বসে ডানহাত মুষ্টিবদ্ধ করে জয় উদযাপন। সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ এগিয়ে এসে অধিনায়কের সঙ্গে হাত মেলালেন। মিরাজ দৌড়ে এসে জানালেন অভিনন্দন। এ এক সুখী পরিবারের চিত্র। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এ পরিবারে ছিল হতাশা, এ পরিবারে ছিল যন্ত্রণা আর হৃদয় ভাঙার আর্তনাদ।
সেই পরিবারে এখন চলছে বিজয় উৎসব। চোখে মুখে হাসি, উল্লাস-উৎফুল্লতায় কাটছে গোটা সময়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। টাইগাররা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে লিখেছে বিজয় কাব্য। ২০০৯ সালেও এমন পারফরম্যান্স করেছিল টাইগাররা। কিন্তু খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোয় ক্রিকেট বিশ্ব তেমন মাতামাতি করেনি। এবার পূর্ণ শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোয় ক্রিকেট বিশ্বের বাহবাই পাচ্ছে টাইগাররা।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩০১ রান করে সফরকারীরা। জবাবে ৬ উইকেটে ২৮৩ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। ১৮ রানের ব্যবধানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের ব্যবধানও ২-১ হলো। ২২তম সিরিজ জয় বাংলাদেশের, দেশের বাইরে পঞ্চম।
বরাবরের মতো ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের হাতেই ছিল সবকিছু। হতাশ করেননি দেশসেরা ওপেনার। ১২৪ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন বাঁহাতি ওপেনার। আরেক ওপেনার এনামুল আজও ছিলেন ব্যর্থ। ৩১ বলে মাত্র ১০ রান করে ফেরেন হোল্ডারের শর্ট বলে।
সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে শুরু হয় তামিমের যুদ্ধ। ভালোভাবেই দুজন যুদ্ধে জয় লাভ করেন। ৯৬ বলে ৮১ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। থিতু হয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে সাকিব ৩৭ রানে আউট হন অ্যাশলে নার্সকে স্লগ সুইপ খেলে। চারে নামা মুশফিকও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। অফস্টাম্পের বাইরে থাকে স্লগ সু্ইপ করতে গিয়ে নার্সের বলে ১২ রানে বোল্ড হন মুশফিক।
মাহমু্দউল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে তামিম পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। সিরিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে তামিম নিজের ফর্মের জানান দেন ভালোভাবেই। তবে সেঞ্চুরির ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। ১০৩ রানে আউট হন দেবেন্দ্র বিশুর বলে। ৭ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি।
তামিম ফিরে গেলেও মাহমুদউল্লাহ টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। দলের রানকে চূড়ায় নিয়ে যেতে শেষ পর্যন্ত একজন ব্যাটসম্যানকে খেলতেই হতো। মাহমুদউল্লাহ কাজের কাজটা করে দেন। ৪৯ বলে ৬৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া সাব্বির রহমান ৯ বলে ১২ এবং মোসাদ্দেক ৫ বলে ১১ রান তুলে বাংলাদেশের রানকে তিনশর চূড়ায় নিয়ে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় মাঠের রেকর্ডও আত্মবিশ্বাসী করতে পারছিল না স্বাগতিকদের। কারণ ওই মাঠে তিনশ রান তাড়া করে জয়ের কোনো রেকর্ড ছিল না। সর্বোচ্চ ২৬৬ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল শুধুমাত্র ওয়েষ্ট ইন্ডিজের।
অতীত পরিসংখ্যান আত্মবিশ্বাসী করতে না পারলেও ক্রিস গেইল আশা দেখাচ্ছিলেন ক্যারিবীয়ানদের। ৬৬ বলে ৭৩ রান করে দলের রানের চাকা একাই টেনেছিলেন। কিন্তু শেষ করে আসতে পারেননি। তাকে সাজঘরের পথ দেখান রুবেল। এর আগে এভিন লুইসকে দলীয় ৫৩ রানে আউট করেন মাশরাফি। সিরিজে তৃতীয়বারের মতো লুইসকে আউট করেন মাশরাফি।এরপর শাই হোপের ধীর গতির হাফ সেঞ্চুরিতে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে গেলেও কাঙ্খিত জুটি পাচ্ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। শেষ দিকে রভম্যান পাওয়েলের বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে ভয় জেগেছিল বাংলাদেশ শিবিরেও। কিন্তু শেষ হাসিটা রভম্যান হাসতে পারেননি। ৪১ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৪ রান করেন রভম্যান। ৯৪ বলে ৬৪ রান আসে শাই হোপের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফি। ৬৩ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মিরাজ, মুস্তাফিজ ও রুবেল।সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা দিয়েছিলেন জয়ের ভীত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। বোলাররা নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নেয় ভালোভাবেই। পরিকল্পনামাফিক এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বোলাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে থামিয়ে রাখেন। ব্যাট-বলের দারুণ পারফরম্যান্সে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ।
টেস্ট সিরিজের পর আত্মবিশ্বাস ছিল তলানিতে। রঙিন পোশাক গায়ে জড়িয়ে পুরোনো আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় টাইগাররা। সেই আত্মবিশ্বাসে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্চে শোনা গেল বাঘের গর্জন। ওয়ানডের পর একই গর্জন টি-টোয়েন্টিতে শোনার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমিরা।