অপরাধ

ভৈরবে প্রণোদনার বরাদ্ধকৃত সার,পাট বীজ বিতরনে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ

ভৈরব ( কিশোরগঞ্জ ) সংবাদদাতা:
ভৈরবে কৃষকদের মাঝে সরকারি প্রণোদনার পাট বীজ ও সার বিতরনে অনিয়ম
ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় উপজেলা পাট উন্নয়ন
কর্মকর্তার বিরুদ্ধে । শুধু অনিয়মই নয় অনেক কৃষকরা পাট উন্নয়ন
অফিসে ধর্ণা দিয়েও পাট বীজ ও সার না পাওয়ায় এ মৌসুমে পাট চাষ
ব্যাহত হবে বলে কৃষকরা মনে করছেন । এদিকে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা
বলছেন সরকারি ভ্যাট ও পরিবহন খরচ মেটাতে বরাদ্ধকৃত সার কৃষকদের মাঝে
বিতরন করতে পারছেন না । তাই ৩ প্রকারের সারের পরিবর্তে কমদামী শুধু
ডিএপি সার বিতরন করছে কৃষকদের মাঝে । বিষয়টি তদন্ত করে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা ।
কৃষি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার কৃষকদের মাঝে সহজ শর্তে
কৃষি ঋণ,কৃষিতে ভর্তুকিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে
সহযোগিতা করছে সরকার। কৃষি বান্ধব সরকার তেমনি পাটের উন্নয়ন
বাড়াতে ও পাট চাষীদেরকে বিনামূল্যে পাট বীজ,ও সার বরাদ্ধ দিয়েছেন ।
ভৈরব পাট উন্নয়ন অফিসের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে
ভৈরবে ২ হাজার ৪ জন কৃষকের জন্য ২ হাজার কেজি পাট বীজ, ৬ টন
টিএসপি সার,১২ টন ইউরিয়া ও ৬ টন এমওপি সারসহ ২৪ টন সার বরাদ্ধ
দিয়েছেন । পাট উন্নয়ন অফিসের হিসাব মতে ১ জন কৃষক ৬ কেজি
ইউরিয়া সার, ৩ কেজি টিএসপি ও ৩ কেজি এম ও পি সহ মোট ১২ কেজি
সার পাবে এবং ১ কেজি করে পাট বীজ পাবে । বর্তমানে বাজারে প্রতি
বস্তা (৫০) কেজি ওজনের টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ১শ টাকা. ইউরিয়া
প্রতি বস্তা ৮শ টাকা,এম ও পি ৭শ ৫০ টাকা এবং ডিএপি ৮শ টাকা খুচরা
দরে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে । কিন্ত পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা
টিএসপি,ইউরিয়া ও এমওপি সার কৃষকদের মাঝে বিতরন না করে । বরাদ্ধের
বাইরে ৮শ টাকা বস্তা দরের কমদামি শুধু ডিএপি সার বিতরন করছে । বাকি
টিএসপি ও ইউরিয়া সার বিতরন করছেনা । এছাড়া ও প্রতি কৃষকের জন্য
১২ কেজি সার বরাদ্ধ থাকলে ও কৃষকদেরকে ১০ কেজি করে সার দেওয়া হচ্ছে ।
এছাড়া ডিলারের কাছ থেকে বরাদ্ধ কৃত সার ক্রয়ের ভাউচার ও দেখাতে
পারেননি এ কর্মকর্তা ।আবার অনেক কৃষকরা পাট বীজ থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে বলে কৃষকদের মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে । কৃষকরা জানান
প্রতি বছর এ মৌসুমে ধান ও মরিচ ফসল ঘরে তোলার পর তারা পাট চাষ করে
থাকেন । কিন্ত পাট অফিসে ধর্ণা দিয়ে ও অনেক কৃষকরা পাট বীজ ও সার
পাননি । তাই কাঙ্খিত পাট আবাদ ব্যাহত হবে এ মৌসুমে । পাট উন্নয়ন

কর্মকর্তার অনিয়ম ও আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষের কাছে দাবি জানান বঞ্চিত কৃষকরা ।
এ বিষয়ে কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নের কৃষক হজর মিয়া জানান, এলাকার
অনেক কৃষকরা পাট অফিসে ধর্ণা দিয়েও পাট বীজ ও সার পাননি । এমনকি
তিনি কয়েক দিন ধর্ণা দিয়েও পান নি ।
এ বিষয়ে একই ইউনিয়নের ধন মিয়া ও এনাম মিয়া জানান, পাট অফিস
থেকে ডিএপি সার পেয়েছেন ১০ কেজি এবং পাট বীজ পেয়েছেন ১
কেজি । টিএসপি ও ইউরিয়া সহ বাকি ২ প্রকারের সার তাদেরকে দেয়নি
পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ।
শিমুল কান্দি ইউনিয়নের কৃষক বিটু মিয়া জানান, কয়েক দিন পাট
অফিসে গিয়ে ধর্ণা দিয়ে ও তিনি পাট বীজ ও সার পাননি । তাই এ বছর
তিনি পাট আবাদ করতে পারবেননা । তাছাড়া তার গ্রামের অনেক কৃষকরা ও
পাননি ।

এ বিষয়ে কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আঃ লতিফ
জানান প্রতি বছর এ মৌসুমে ধান ও মরিচ ফসল ঘরে তোলার পর তারা পাট
চাষ করে থাকেন । কিন্ত পাট অফিসে ধর্ণা দিয়ে ও অনেক কৃষকরা পাট
বীজ ও সার পাননি । আবার যারা পেয়েছেন তারা শুধু ১০ কেজি ডিএপি সার
ও ১ কেজি পাট বীজ পেয়েছেন । তাই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও পাট ও বস্ত্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
করেন ।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা উপ-সহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আশরাফ
সিদ্দিকী অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, সরকার পরিবহন খরচ না দেয়ায়, ভ্যাট ও
পরিবহন খরচ মেটাতে তিনি ৩ প্রকারের সার না দিয়ে শুধু ৮শ টাকা দরের
ডিএপি ( ডেপ ) সার ১২ কেজির বরাদ্ধের জায়গায় প্রতি কৃষককে ১০
কেজি করে দিচ্ছেন ।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান
সবুজ জানান, অনিয়ম পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *