বিনোদন

পাস কার্ডে বিটিভির সীল, চিত্রশিল্পীদের উপস্থিতি কম কেন?

বিনোদন প্রতিবেদক : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস দীর্ঘ ও গৌরবের। দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে জব্বার খান ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।

১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থাপিত বিলের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা(ইপিএফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন তিনি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা(বিএফডিসি) করা হয়। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় বিএফডিসি’র। ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন(বিটিভি) কার্যক্রম শুরু করে। বিএফডিসি’র পরে(বিটিভি) প্রতিষ্ঠিত হলেও চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কিছু কর্মকর্তার তৎপরতা চোখে পড়ে। এটা দুঃখজনক ও লজ্জার বলে অভিহিত করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল রোববার(৮ জুলাই)রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬’ প্রদান করা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত পুরো অনুষ্ঠানে বিটিভির কর্মকর্তাদের তৎপরতা দেখা যায়। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ও কলাকুশলীদের গলায় ঝুলানো পাস কার্ডে বিটিভি’র সীল দেখা যায়। পাস কার্ডে আয়োজকের স্থানে বিটিভির নাম উল্লেখ করা রয়েছে। কার্ডের কোথাও তথ্য মন্ত্রণালয় অথবা বিএফডিসির নাম বা সীল নেই। হঠাৎ দেখে মনে হবে এটা বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) কোনো অনুষ্ঠান।

গতকাল পুরস্কার বিতরণ শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে নৃত্য পরিবেশন করেন ছোট পর্দার নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ। নৃত্যে কয়েকবার মৌকে দেখা গেলেও বাকি শিল্পীদের প্রায় সবাই অপরিচিত মুখ। এদের কেউ চলচ্চিত্রের শিল্পী নয়। শোনা যাচ্ছে, এরা বিটিভিতে নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন। তাদের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয় দশ মিনিট। এরপর কয়েকজন গায়ক গান পরিবেশন করেন। সব শেষে চলচ্চিত্র শিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্য পরিবেশন করা হয়। তাদেরও সময় দেয়া হয় দশ মিনিট। গতকাল রোববার এভাবেই ‘বিটিভিময়’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়।

এ বিষয়ে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র শিল্পীদের বিটিভি’র সীল বুকে নিয়ে ঘুরতে হয়। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। এছাড়া টিভি শিল্পীদের দশ মিনিট পারফর্ম করার জন্য সময় দেয়া হয়। অন্যদিকে চলচ্চিত্র শিল্পীদের সময় তুলনামূলক খুবই কম দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ও দুঃখের। এ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠানের  আয়োজন করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। বিটিভি আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল। আমরাও ছিলাম। পাস কার্ডে বিটিভির সীল কেন ছিল এটা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’

এদিকে চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠানে খুব বেশি চলচ্চিত্র শিল্পীদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। প্রবীণ অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, চিত্রনায়ক আলমগীর, টেলি সামাদ, সুচন্দা, আনোয়ারা, চিত্রনায়ক জাভেদ, নির্মাতা আমজাদ হোসেন, ইলিয়াস কাঞ্চন, সুর্বণা মুস্তাফা ছাড়া আর তেমন কোনো প্রবীণ শিল্পীকে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। অন্যদিকে এ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন এ তালিকায় রয়েছেন চিত্রনায়ক আমিন খান, ফেরদৌস, জায়েদ খান, ইমন, সাইমন সাদিক, পূর্ণিমা, পপি, অপু বিশ্বাস, সাহারা, তমা মির্জা।

বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা যায়, চলচ্চিত্রের অধিকাংশ শিল্পীদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয়া সত্যেও তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। চিত্রনায়ক সোহেল রানা, কবরী, এটিএম শামসুজ্জামানসহ অনেক প্রবীণ অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়নি। এই প্রজন্মের চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না এ তালিকায় রয়েছেন, ওমর সানি, মৌসুমী, শাবনূর, অমিত হাসান, শাকিব খান, বাপ্পি চৌধুরী, আরিফিন শুভ, শাহরিয়াজ, মাহিয়া মাহি, পরীমনি, আঁচল, বিদ্যা সিনহা মিম, বুবলী, নুসরাত ফারিয়াসহ অনেকেই। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই এসব শিল্পীরা খ্যাতি অর্জন করেছেন। এদের কেউ কেউ জনপ্রিয়তার শীর্ষেও অবস্থান করেছেন। আর সেই চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি নেই। বিষয়টি চলচ্চিত্রের অনেকেই আড় চোখে দেখছেন।

টেলিভিশন শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিদ্দিক, বাবর, হুমায়রা হিমু, ডিএ তায়েব প্রমুখ। এছাড়া যেদিকে চোখ গেছে সেদিকেই অপরিচিত লোকে লোকারণ্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান হলেও চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংগীত জড়িত। সংগীত সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিও কম ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে। সংগীতশিল্পী খোরশেদ আলম, সুবীর নন্দীসহ এ প্রজন্মের সংগীতশিল্পী প্রতীক হাসান, বেলাল খান, এসডি রুবেল, কোনালসহ হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সংগীত ভুবনের কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, কনক চাপা, এন্ড্রু কিশোর, আয়ুব বাচ্চুসহ চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এমন বরেণ্য শিল্পীদের দেখা মেলেনি অনুষ্ঠানে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চলচ্চিত্র রিলেটেড কার্ড আমরা বিতরণ করেছি। আমরা আবার বিভিন্ন সংগঠনের কাছে তা হস্তান্তর করেছি, তারা তাদের সদস্যদের দিয়েছেন। এছাড়া আমরা নিজেরাও কিছু কার্ড দিয়েছি।’

এসব শিল্পীদের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পীদের সবার আমন্ত্রণপত্র আমরা পৌঁছে দিয়েছি। সংগীতশিল্পীদের কার্ড প্রদানের দায়িত্ব আমাদের ছিল না।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আমন্ত্রপত্র পেয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চিত্রনায়ক ওমর সানি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চলচ্চিত্র পুরস্কারের আমন্ত্রণপত্র আমি ও মৌসুমী দুজনেই পেয়েছি। কিন্তু আমার মামা শ্বশুর অসুস্থ থাকার কারণে যেতে পারিনি। এদিকে মৌসুমীর প্রেসার লো হয়ে গিয়েছে। তাই যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।’

চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সিনেমার শুটিংয়ের কারণে চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। ওই দিন শুটিং না করলে শুটিং স্পটের শিডিউল পাওয়া মুশকিল হয়ে যেত। তাই বাধ্য হয়েই কাজটি করেছি।’

চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সেন্সর বোর্ড, আর্কাইভ। চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এই দুই সংগঠনের লোকজনদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *