সিনিয়র প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে প্রধান শর্ত হিসেবে উপাস্থাপন করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সেনাবাহিনী মোতায়েন, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনেরও দাবি তুলেছে দলটি।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বিএনপির নেতারা এসব শর্ত দেন। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তার মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে হলে এক নম্বর শর্ত– খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। ’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত ও অবৈধ। এদের হাত থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। এরা দেশে ভয়ের রাজ্য তৈরি করেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ অনিরাপদ। মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়।
প্রায় আড়াই বছর পর রাজধানীতে ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। কার্যালয়ের সামনেই ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে আসে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সমস্ত দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেভাবে বুকে চেপে আছে, তার থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।’
‘দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অন্যান্য সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। স্বস্ব ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে জগৎদল পাথরের ন্যায় বুকে চেপে বসে থাকা সরকারকে সরাতে আন্দোলনে অগ্রসর হতে হবে’, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
কোট সংস্কারের দাবিতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। দেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকেও বলা হচ্ছে অন্যায় করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করুন’।
সরকার বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে চায় না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নিরপক্ষ নির্বাচন হলে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ২০ আসন ও পাবে না। তাই তারা আবারও ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করতে চায়। সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। তারা খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে ফের নামে সাজানো নাটক করতে চায়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে না। কারণ তাদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, তার প্রমাণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো।
নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান মোশাররফ।
তিনি বলেন, ‘সোজা আঙুলে ঘি উঠে না। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে এসব দাবি আদায় করতে হবে। আর আন্দোলনের জন্য দেশের মানুষ ও বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ দেশের মানুষ এই স্বৈরচার সরকারের অবসান ঘটাতে চায়’।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।