মোঃ নজরুল ইসলাম,মুরাদগর (কুমিল্লা) ,প্রতিনিধি:
ফুফাতো বোনকে ধর্ষনের অভিযোগে সদ্য বিবাহিত মামাতো ভাইকে গ্রেপ্তারের ৫ ঘন্টা পর থানায় বসে রফাদফার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ওসি সাদেকুর রহমানের অনুমোতি ক্রমে সালিশে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা রায় করেন অভিযুক্ত মামাতো ভাই শাহিনের উপর। সেই টাকা থেকে অভিযোগকারী মামাতো বোনকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে থানার খরচ বাবদ বাকী ৬০ হাজার টাকা রেখে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শাহিন (২৫) বাহরাইন প্রবাসি, সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুফ নগর গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে।
বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার আলোচনা ও সমালোচনা এখন উপজেলা সদরের প্রতিটি চা-স্টলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শাহিন প্রবাসে থাকাকালে দুই পরিবারের সম্মতিতে মামাতো বোনের সাথে বিবাহ ঠিক করেন। এ বছরের আগষ্ট মাসের ১৭ তারিখ শাহিন দেশে আসার পর তার মামাতো বোনকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করেন। এক পর্যায়ে তাদের দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে শাহিন পরিবারের পরামর্শে অন্যত্র বিয়ে করার কথা শুনে তার ফুফাতো বোন শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের অবহিত করেন। এতেও কোন সূরাহা না হওয়ায় গন্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শাহিন অন্যত্র বিয়ে করে। বিয়ের পরদিন অভিযোগকারী পুনরায় ঘটনাটি নিস্পত্তি চেয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তদের দ্বারস্থ হয়। এতেও কোন কাজ না হওয়ায় শনিবার সকালে মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সে অভিযোগের ভিত্তিতে ওইদিন দুপুরে মুরাদনগর থানার এএসআই নুর-আজম অভিযুক্ত শাহিনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
অভিযোগে ৪ নম্বর আসামী অভিযুক্ত শাহিনের বোন শাহিনা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগকারী আমার ফুফাতো বোন। আমার ভাই বিয়ে করেছে মাত্র ৪ দিন হয়। তার টাকা পয়সা দেখে তাকে বিপদে ফেরার জন্য গ্রামের কিছু খারাপ লোকের কুপরামর্শে থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করে। তারই জের ধরে শনিবার দুপুরে পুলিশ আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। বর্তমানে কি অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রফাদফার জন্য প্রথমে থানায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরো ৩০ হাজার টাকা নেয়। আমাকে বড় স্যার বলেন, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে অভিযোগকারী আমার ফুফাতো বোনকে ৮০ হাজার টাকা দেয়া হবে, বাকী ৬০ হাজার টাকা থানার খরচ বাবদ রাখা হয়েছে।
সালিশে উপস্থিত ইউসুফনগর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ মাস্টার মুঠোফোনে বলেন, আমি উপস্থিত ছিলাম, তবে বিচার করিনি। দুপক্ষের উপস্থিতিতে থানায় বসে ৮০ হাজার টাকা টাকা ধার্য্য করে এক ঘন্টার মধ্যে মেয়েকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সালিশকারি এএসআই নূর-আজম বলেন, ফুফাতো বোনকে তার মামাতো ভাই বিয়ে না করে অন্য জায়গায় বিয়ে করায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় ওই মেয়ে। পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে মামাতো ভাই শাহিন কে থানায় নিয়ে আসি। দু’পক্ষের অনুমোতি ক্রমেই ওসি স্যারের নির্দেশে সালিশ করেছি। আর সালিশে মেয়েকে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে ৮০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। সেই টাকাই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। এর বাহিরে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাদেকুর রহমান সালিশের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মামাতো ভাই বিয়ে না করায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন অভিযুক্তর ফুফাতো বোন। মূলত আমার অনুমোতি ক্রমেই এএসআই নূর-আজম এই সালিশটি করেছে। আমার জানামতে মেয়েটিকে বিবাহ দেয়ার জন্য ওই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। তবে কত টাকা আমার জানা নেই, আমি কুমিল্লায় আছি রাতে বলতে পারবো কত টাকা নেয়া হয়েছে।