রাসেদুজ্জামান রাসেল:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের পাশ দিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে অবরুদ্ধ হওয়ার আশংকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ওই এলাকার কয়েকশ বস্তিবাসী নারী, পুরুষ ও তাদের শিশু সন্তানরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ভৈরবের নিউটাউন রোড সংলগ্ন বস্তি এলাকার রেললাইনের পাশে ওইসব কর্মসূচী পালন করেন তারা।
ওইসব কর্মসূচী থেকে তারা দাবি করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের যাওয়া-আসার বিষয়টি নিয়ে না ভেবেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছেন। এটি নির্মাণ হলে তারা পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তাদের বস্তি থেকে বের হওয়া ও চলাচল সম্পূর্ণই বন্ধ হয়ে যাবে।
তারা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভূমিহীন ও অসহায় মানুষরা এখানে বসবাস শুরু করেন। এখানে অনেকেই আছেন, যাদের জন্ম, বিয়ে-সাদি এই বস্তিতেই হয়েছে। তারা নিতান্তই খেঁটে খাওয়া মানুষ। টাকা দিয়ে ভাড়া থাকার মতো সামর্থ্য তাদের নেই।
তারা অভিযোগ করেন, ভিনদেশের রোহিঙ্গারা যদি এই দেশে থাকার অধিকার পায়, তবে তারা কেনো নিজ দেশের এই বস্তিতে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবেন না ? তারা তাদের চলাচলের পথ খোলা রেখে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহŸান জানান। এ সময় অনেকেইে বাসস্থান হারানোর ভয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জোসনা বেগম, গোলাপ মিয়া, নাছিমা বেগম, হানিফ মিয়া, আক্কাছ আলী প্রমূখ।
এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে বস্তির শিশুদের জন্য সেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত “সবার স্কুলের” উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক মাহিন জানান, বিগত ১৪ মাস যাবৎ তাদের পরিচালিত সবার স্কুলে ৩০জন শিক্ষা শিক্ষা গ্রহণ করছিলো। এই কাঁটাতারের বেড়ার কারণে আসা-যাওয়া করতে না পারলে ওইসব শিশুদের শিক্ষার পথ অবরুদ্ধ হবে। তিনিও বস্তিবাসীদের যাতায়াতের পথ রেখে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের আহŸান জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি।
পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাদের দাবি তুলে ধরে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তাদের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আরএকের ঠিকারের প্রতিনিধি মো: মিজানুর রহমান জানান, ভৈরবের রেলওয়ে স্টেশন থেকে পলাশ সিনেমা হল মোড় পর্যন্ত সা¤প্রতিক সময়ে চুরি, ছিনতাই, খুন ও মাদক চোরাচালান বেড়ে যাওয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই এলাকার দুইপাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছেন। যাত্রীসহ স্থানীয় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্যই এই পদক্ষেপ। আমরা কাজ পেয়েছি। ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কাজ বন্ধ রাখার কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ভৈরব বাজারঘাটের ঊর্ব্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিথুন কুমার দাস জানান, মানবিক দিকটি বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন।