স্পোর্টস ডেস্ক: আঁতোয়ান গ্রিজমানের বাড়ানো পাসে জোরালো শট নিলেন পল পগবা। রক্ষণের অত্যন্ত প্রহরী ভিদা ঝাঁপিয়ে বল রক্ষা করলেন। প্রতিবিম্বিত হয়ে বল আবারও পগবার পায়ে।
এবার কিছুটা সময় নিলেন। কথা দিয়েছিলেন, ২০১৬ ইউরোর মতো ভুল করবেন না। সেবার ফাইনালে প্রতিপক্ষকে অবমূল্যায়ন করে শিরোপা হারিয়েছিল ফ্রান্স। সত্যিই এবার সেই ভুল করলেন না। প্রথমে জায়গা তৈরি করলেন। এরপর বামপায়ের শট। বল সোজা ক্রোয়েশিয়ার জালে। রূপকথার রাত কাটানোর কথা ছিল ক্রোয়াটদের। কিন্তু মস্কোর ফাইনালে ৩০ মিনিট আগেই সবশেষ ক্রোয়েশিয়ার। পগবার গোলে ৩-১ গোলে এগিয়ে ফ্রান্স।
আর্জেন্টিনার রেফারি নেস্তোর পিতানো যখন রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ বাঁশি বাজালেন তখন ব্যবধান ৪-২। রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি হলো। ক্রোয়েশিয়ার রূপকথা লিখা হলো না। ২০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের মুকুট জিতল ফ্রান্স। আর ক্রোয়েশিয়া আটকে গেল বিশ্বকাপের ওই পুরোনো ইতিহাসে। ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল। সবাইকে চমকে গিয়ে শেষ চারে উঠলেও ফ্রান্স বাঁধা টপকাতে পারেনি।
দুই দশক পর আবারও তাদের স্বপ্ন ভাঙল ফ্রান্স। এবার ব্যবধান অনেক বড়। তাইতো হারের ক্ষতটাও বড়। মস্কোর জায়ান্ট স্ক্রিনে বারবারই ভেসে ওঠে ‘ক্রাইস্ট দ্য রিদিমার’, সূর্যকে পেছনে রেখে তিনি দুই হাত মেলে ধরেছেন। শেষ পর্যন্ত ওই শিরোপা উঠল গ্রিজমান, এমবাপে আর পগবাদের হাতে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফরাসিরা। আগামী চার বছর ফুটবল সাম্রাজ্যের রাজা তারা।
তবে ইতিহাস পক্ষে ছিল না নবযুগের ক্রোয়াটদের। কোনো কিছুই তাদের আত্মবিশ্বাসী করতে পারছিল না। মুখোমুখি লড়াইয়ে বড় কোনো প্রভাব কোনোদিনও বিস্তার করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালের আগে দুই দলের পাঁচ মুখোমুখিতে ফ্রান্স জিতেছে তিনবার। বাকি দুটি ড্র হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮’এর সেমিফাইনাল তো রয়েছেই। এবারও সেই ইতিহাস তাদেরকে আটকে দিল ব্রাকেটবন্দী করে। অমরত্বের স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ক্রোয়াটরা নিজেদের নামের পাশে যুক্ত করল রানার্সআপ খেতাব।
ফাইনাল হারে নিজেদের ভুলটাই যে সবথেকে বড় ক্রোয়েশিয়ার। প্রথম গোলটি খেল আত্মঘাতী। পরেরটি ডি বক্সের ভেতরে হ্যান্ডবল থেকে পেনাল্টিতে। ফ্রান্সের ভাগ্য খুলতে আর কি লাগে! কিন্তু বিধাতা চেয়েছিল ফ্রান্স নিজেরাও কিছু করে দেখাক বিশ্বমঞ্চে। সেই সূত্রে ৬০ মিনিটে পগবার গোল। বিশ্বকাপের সব আলো কেড়ে নেওয়া কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও খালি হাতে রাখলেন না বিধাতা। ৬৫ মিনিটে এমবাপ্পের ডানপায়ের শট খুঁজে নেয় ক্রোয়েশিয়ার জাল।
এর আগে ১৮ মিনিটে মারিও মানজুকিচের হেডে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া! অথচ তার গোলেই এক ম্যাচ আগে দল পেয়েছিল ফাইনালের টিকিট। বিশ্বকাপের ২১তম আসরে এসে ফাইনালে প্রথমবারের মতো আত্মঘাতী গোল পেল ফুটবল বিশ্ব। দশ মিনিট পর ইভান পেরিসিচ গোল করেন ধ্রুপদী এক শটে। ডি বক্সের ভেতরে জায়গা নিয়ে বলে শট করে হুগো লরিসকে বোকা বানান। ১-১ এ সমতায় দারুণভাবে এগুচ্ছিল ম্যাচ। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে উঠে দুই দলের লড়াই।
৩৮ মিনিটে সব ওলট-পালট করে দেন পেরিসিচ, ভিএআর! গ্রিজমানের কর্ণার কিক সোজা এসে আঘাত করে পেরিসিচের হাতে। রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়। ফ্রান্সের ফুটবলারদের জোরাজুরিতে ভিএআরের সাহায্য নেন। তাতেই কপাল পুড়ে ক্রোয়েশিয়ার। ভিডিও দেখে পেনাল্টির নির্দেশ দেন নেস্তোর পিতানো। গ্রিজমানের ঠান্ডা মাথার সোজা শটে ২-১ এ লিড ফ্রান্সের।
প্রথমার্ধে ওই ব্যবধানে শেষ করলেও ফিরে এসে ফ্রান্সকে উচ্ছ্বাসে ভাসান পগবা, এমবাপে। ৬৯ মিনিটে ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিসের ভুলে মানজুকিচ গোল করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তার গোল পরাজয়ের ব্যবধান কমায় মাত্র।
ফ্রান্স জিতল দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। কাঁদল বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া লুকা মড্রিচ। যে ক্রন্দন আর হাহাকার মস্কো ছাড়িয়ে বুক ভারি করে তুলল দুনিয়াময় ক্রোয়েশিয়ার ভক্তদেরও। পুরো মস্কো ছিল লাল-সাদার সমুদ্র। ফ্রান্সের সমর্থক তুলনামূলক কমই ছিল। কিন্তু লাল-সাদার সমুদ্রের ঢল স্টেডিয়াম ছাড়ল কান্নায়। হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য!