রাজনীতি

নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যার ৯ বছর

নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হত্যার ৯ম বার্ষিকী আজ। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর তিনি দলীয় কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মন্ডল দীর্ঘ ৮ মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এতে মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন, এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তার ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারকেও অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই মোবারক হোসেন ছাড়া সবাই আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে যান। দীর্ঘ ৭ বছর পর গত ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর মোবারক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

এদিকে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী মো. কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী। তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদীর আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন। এ ঘটনায় জামিনে বের হয়ে আসামিরা সুপ্রীম কোর্টের আপিল ডিভিশনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এরই ধারাবিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানীর অপেক্ষায় থাকার পর আদালত ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি আসামিদের করার রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে বাদির নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে এবং বাদী ও স্বাক্ষীগণের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন নরসিংদী জজ আদালতের মুখ্য বিচারিক হাকিম শুধুমাত্র বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহণ করে তদন্ত শেষ করে দেন। এঘটনায় বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।

মামলার বাদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত প্রকৃত আসামিদেরকে বিচারের আওতায় না আনা হবে ততদিন আমরা আইনি লড়াই করে যাব।

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের মেঝেরকান্দি গ্রামের শাহ্ নেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে লোকমান হোসেন কলেজ জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। পরে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনপ্রিয়তার কারণে ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন লোকমান। দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায় ২০১১ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে।

ট্যাক্স আদায়ে সরকারের পৌরসভা পারফরমেন্স রিভিউ কমিটির বিবেচনায় ২০০৬ সালে নরসিংদী পৌরসভা শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে। ফলে ২০০৮ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি’র বিবেচনায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মেয়রের পুরস্কার লাভ করেছিলেন লোকমান হোসেন। তিনি ঢাকা বিভাগীয় মেয়র সমিতির সভাপতিও ছিলেন।

লোকমান হোসেনের ৯ম মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করেছে জনবন্ধু শহীদ লোকমান পরিষদ। প্রয়াত লোকমান হোসেনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল, গণভোজ, স্মরণসভা, বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়াও একই দিনে নরসিংদী পৌর শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডসহ শহরে ৭১টি স্পটে গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *