সমাধান ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে কুমিল্লা জেলায় (১১ সংসদীয় আসন) আওয়ামী লীগ থেকে দু’জনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। মনোনয়ন প্রাপ্তরা হলেন, পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য, ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে শহীদ ও বাংলা ভাষার অন্যতম রূপকার ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি, স্মাইলিং প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ও প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আরমা দত্ত এবং কুমিল্লার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের মেয়ে ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শহীদ পরিবারের সন্তান আরমা দত্ত
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও নারী নেত্রী এবং বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত আরমা দত্তের জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই কুমিল্লা নগরীর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ সড়কে। তিনি ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে শহীদ ও পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি। আরমা দত্তের বাবা সঞ্জীব দত্ত (ধীরেন্দ্র নাথের বড় ছেলে) ও মা প্রতীতি দেবী। বাবা সঞ্জীব দত্ত ছিলেন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক। মা প্রতীতি দেবী বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্তিক ঘটকের যমজ বোন।
আরমা দত্ত ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা নগরীর নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। ১৯৭৪ সালে যেদিন সকালে তার মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হয় সেদিন বিকেলেই তিনি ঢাবিতে একই বিভাগে শিক্ষতায় যোগ দেন।
পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রথম যিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন সেই ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত তার দাদা। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে কুমিল্লার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী অ্যাডভোকেট আবদুল করিমের তত্ত্বাবধানে আরমা দত্তের দাদা পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য, ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ও কাকা দিলীপকুমার দত্তকে গ্রেফতার এবং পরে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সাত মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সঞ্জীব দত্ত লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ২৭ এপ্রিল ১৯৯১ সালে কলকাতায় মৃত্যু করেন।
আরমা দত্ত সঞ্জীব দত্তের বড় মেয়ে। নারী জাগরণে অবদানের কারণে ২০১৬ সালে তিনি বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন।
আঞ্জুম সুলতানা সীমা
কুমিল্লার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আফজল অ্যাডভোকেটের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সীমা ২০০০-২০১৬ পর্যন্ত টানা ১৬ বছর কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কুমিল্লা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৯ সালে তিনি জেলার আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সীমা নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন। তবে ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বর্তমানে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সীমা ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী। তার স্বামী নেসার উদ্দিন আহমেদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী।