কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সারা ১৬ ই ডিসেম্ব বিজয় দিবস হলে ও আজ ১৯ ডিসেম্বর ভৈরব স্বধীন হতে আরো তিন দিন পর পাক হানাদার মুক্ত হয় ভৈরব এইদিনে, তাই ১৯ শে ডিসেম্বর ভৈরব হানাদার মুক্ত দিবস। আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় পাক্তিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ভৈরবকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। র্দীঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্নসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও বন্দরনগরী ভৈরব তখনও হানাদার মুক্ত হয়নি। এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও তিন দিন। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পানাউল্লারচর এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী আলগড়া খেয়াঘাটে নদী পারাপারে অপেক্ষমান নিরস্ত্র-অসহায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে ব্রাশ ফায়ারের মধ্যদিয়ে ভৈরবকে দখল করে নেয় পাকহানাদার বাহিনী। ওই স্থানে পড়ে থাকা নিহত লোকজনকে গণকবর দেয় আশ পাশের মানুষজন। বর্তমানে পানাউল্লারচর খেয়াঘাটের গণকবর ভৈরবের ‘বধ্যভূমি’ হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও দীর্ঘ যুদ্ধের সময় ভৈরবের শহীদ আতিক, নূরু, ক্যাডেট খোরশেদ আলম, আলকাছ মিয়া, আশুরঞ্জন দেবনাথ, আক্তার মিয়া, নোয়াজ মিয়া, আবু লায়েছ মিয়া, সহিদ মিয়া, নায়েব আলী, গিয়াস উদ্দিন ও রইছ উদ্দিন সহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো ভৈরব শহর। ১৪ এপ্রিলের পর থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষররা কৌশলগত কারণে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শক্ত অবস্থান ধরে রাখে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস। ওই সময় পাকহানাদার বাহিনী অসংখ্য নারী-পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ-বনিতাকে হত্যা ও অসংখ্য মা-বোনদের ইজ্জত লুটসহ বিভিন্ন বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারীদের শহীদদের স্মরণে ভৈরব শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নির্মিত হয়েছে ‘দুর্জয় ভৈরব’ নামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য। জানাযায়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পিছু হটতে থাকে। সে সময় ভৈরব পৌর এলাকায় ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর শক্তঘাঁটি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরাজিত পাকবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে ভৈরবে এসে অবস্থান নেয়। ফলে জনবল ও অস্ত্র-সস্ত্রে ভৈরবে পাকবাহিনীর শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ৯ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনী পূর্বদিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থেকে এগিয়ে আসা মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর গতিরোধ করতে ভৈরবে অবস্থিত ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের মেঘনা নদীর উপর নির্মিত ভৈরব রেলওয়ে সেতুটিকে শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী রাজধানী ঢাকার দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। রাজধানীর দিকে যাওয়ার পথে একে একে বিভিন্ন অঞ্চল পাকহানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়। কিন্তু ভৈরবে পাক বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি থাকায় যৌথবাহিনী ভৈরবকে মুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওই সময় যৌথবাহিনী ভৈরব শহরকে পাশ কাটিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে যায়। তাই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও ভৈরব শহর পাকিস্তানী বাহিনী দ্বারা অবরুদ্ধ থেকে যায়। শহরের ঘোড়াকান্দা এলাকার জব্বার জুট মিলে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১০ হাজার পাকবাহিনীকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-সস্ত্রসহ চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পুরো ভৈরব শহর ঘেরাও করে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পনের আহবান জানালে পরদিন ১৯ ডিসেম্বর সকালে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে মিত্রবাহিনীর জনৈক কর্নেল ও মেজর মেহতা পাকবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: সায়দুল্লাহ মিয়ার সাথে আলোচনা করে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
Related Articles
লিবিয়া হত্যাকান্ডে ভৈরবে দুই যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
জয়নাল আবেদীন রিটন, বিশেষ প্রতিনিধি: লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যার পর থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের দুই যুবকের কোন হদিস না পাওয়ায় এই দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তারা আজও বেচেঁ আছে কি-না মারা গেছেন জানতে চাই স্বজনরা। আর নিহত এবং আহতদের তালিকায় তাদের কারো নাম না থাকায় দিক-বেদিক ছুটছেন পরিবার-পরিজনরা। সরকারের কাছে তাদের পরিবারের দাবী, […]
সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তাদের স্পিকারের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সোমবার জাতীয় সংসদে স্পিকারের কার্যালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ. ই. ম গোলাম কিবরিয়া, অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সীমান্তে হত্যা বন্ধ ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সীমান্তে হত্যা বন্ধে ও বিএসএফ কর্তৃক নিহত প্রতি বাংলাদেশী পরিবারকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে, পাশাপাশি নিহত ও নির্যাতিত বাংলাদেশিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে । জনস্বার্থে […]