ঢাকা, ১৫ জুলাই- টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট, সোমেশ্বরী ও কংশসহ অধিকাংশ নদীর পানি বেড়ে উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
গাইবান্ধায় বাগুড়িয়া বাঁধ ভেঙে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ১১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে ৩০০ হেক্টর জমির ফসল।
কুড়িগ্রামে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে দুই লাখ মানুষ।
লালমনিরহাটে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন শতাধিক বাড়িঘর ভেসে গেছে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তীব্র স্রোতে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুড়িয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় একশ ফুট ধ্বসে গেছে। এতে বাগুড়িয়া গ্রামের সাত শতাধিক বাড়িঘর এবং ওইসব এলাকার বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
গাইবান্ধায় সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তীব্র স্রোতে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুড়িয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় একশ ফুট ধ্বসে গেছে। এতে বাগুড়িয়া গ্রামের সাত শতাধিক বাড়িঘর এবং ওইসব এলাকার বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।এদিকে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রবিবার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
ফলে জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধার সদর উপজেলার ১১৩টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের মাঠে বন্যার পানি উঠায় শনিবার থেকে ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, রোববার বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার, তিস্তার ২০ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার সামান্য নিচে রয়েছে।
তিনি জানান, পাউবোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের সতর্ক রাখা হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধসহ কোনো বাঁধ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি তারা তদারকি করছেন। এসব নদ-নদীর ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোয় ভাঙনরোধে ৬৫ হাজারের বেশি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, সদরের মোল্লারচর, কামারজানী, ফুলছড়ির উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি এবং সাঘাটার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ১৬৫টি চোট বড় চর এবং নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের আরও ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ওইসব এলাকায় প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে শতশত ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছ-পালাসহ ফসলি জমি। নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে অন্যের জায়গা, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।
পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ধানের বীজ তলা, পাট, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের জমি। এতে চলাচলসহ গবাদি পশুর মধ্যে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন মানুষরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী জানান, গত শুক্রবার থেকে হটাৎ করে বিদ্যালয়ের মাঠ ও ভবনে বন্যার পানিতে উঠতে শুরু করে। একারণে জেলায় ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ফুলছড়িতে ৫৫টি, সাঘাটায় ২২টি, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ১৯টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ আছে বলে তিনি জানান।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম ফেরদৌস জানান, জেলায় রোপা আউস ধান ক্ষেত ১৩০ হেক্টর, পাট ৬৭ হেক্টর, আমন বীজতলা ১১ হেক্টর ও শাকসবজি ক্ষেত ৮৫ হেক্টর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, জেলার ৪টি উপজেলার প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং পানিবন্দি নিরাশ্রয় মানুষের জন্য ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্যা কবলিত ৪ উপজেলায় ২৪০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা, ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুখাদ্য সংকট। চারদিকে পানি আর পানি। কোথাও কোনো খালি জায়গা নেই। গবাদিপশু রাখবার মতো উঁচু স্থানও নেই।
জেলার ৯টি উপজেলার চরাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫২টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রোববার বিকাল ৩টায় চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৭৬ সে.মি., নুনখাওয়ায় ৪০ সে.মি., সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৮১ সে.মি.। তবে কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২ সে.মি. কমে বিপদসীমার ২০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বন্যার পাশাপাশি নদীভাঙনে এ পর্যন্ত গৃহহীন হয়েছে এক হাজার ৩১টি পরিবার। ভেঙে গেছে দুটি স্কুল।
এদিকে, সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, বাংটুর ঘাট, উলিপুরের চর বজরা ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলান গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।চরাঞ্চলের সকল কাঁচা রাস্তা ডুবে যাওয়ার পর কলা গাছের ভেলা ও নৌকা নির্ভর হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক নিমজ্জিত হওয়ায় এসব সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে ঘোগাদহ-যাত্রাপুর সড়ক, ভিতরবন্দ-নুনখাওয়া সড়ক রয়েছে। সড়ক বিভাগের আওতাধীন উলিপুর-বজরা সড়ক ও ভিতরবন্দ-কালিগঞ্জ সড়কের দুটি স্থানে ১৩০ মিটার এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর ও কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে পানি রাস্তা উঠে যাতে যানচলাচল বন্ধ হতে না পারে সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।
পানি বাড়ছে, বাড়ছে কৃষি ক্ষতিও। কুড়িগ্রামে বন্যায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে আমনের বীজতলা, আউস, সবজি, কলা ভুট্রা ও পাট। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকার ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
স্কুলগৃহে, মাঠে ও চলাচলের রাস্তায় পানি ওঠায় কুড়িগ্রামে ২৮৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্কুলের অনেকগুলোর মাঠ চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণকে বন্যা মোকাবেলায় সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে রোববার দুপুর বিকেল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সে.মি. উপর দিয়ে এবং শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতায় নাকাল জেলার নদী তীরবর্তী পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, মোগলহাট ও রাজপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক বানভাসী মানুষ।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিন বালাপাড়া কুটিরপাড় বালির বাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কমপক্ষে ৪০টি বাড়ি।
গত শনিবার রাত থেকেই বাঁধের কিছু অংশ ভাঙ্গতে শুরু করে। সকাল হতেই বাঁধের প্রায় ১ কিলোমিটার অংশ নদীগর্ভে চলে যায়। আতংকিত মানুষজন বাড়ি ঘর সরাতে শুরু করলেও ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে যায় ৪০টি বাড়ি। নদীগর্ভে বাড়ি ঘর হারিয়ে বাধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার।
ভোরের দিকে একই ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া ওয়াপদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। এতে চৌধুরীপাড়া, হাজীপাড়া, রজবপাড়া ও রসুলপাড়া গ্রামের বেশকিছু বাড়ি ও ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়।
এ দিকে শনিবার রাতে পাটগ্রামের বুড়িমারী ইউনিয়নে ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে মারা যায় আলেমা বেগম(৪৫) নামে এক গৃহবধু। এতে প্রায় তিন শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্থ হয় বলে জানায় জেলা প্রশাসক(ভারপ্রাপ্ত)আহসান হাবিব।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ড বন্যাকবলিত। ১৯ টন চাল ও কিছ শুকনো খাবার পেয়েছেন তিনি যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তিনি স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ওয়াপদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী হারুন-অর -রশিদ জানান, ওয়াপদা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ভাঙন কবলিত অংশে এ পর্যন্ত বালি ভর্তি তিনশ জিও ব্যাগ ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুটিরপাড় বালুর বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ অবস্থায় ওই বাঁধ রক্ষা করা বেশ কঠিন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিবে বলেও তিনি জানান।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) আহসান হাবিব বলেন, জেলায় বানভাসীদের মাঝে ১৫শ শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট ঢাকা থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার লালমনিরহাটের বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন ও ত্রান বিতরন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তা ব্যারেজ থেকে ব্রম্মপুত্র নদী পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার অংশে দুই তীরে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের সরকারের পরিকল্পনার রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে এ ব্যাপারে চীন সরকারের সাথে তার আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হবে।”
নীলফামারী
নীলফামারীতে তিস্তা নদীর বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। রোববার ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেণ্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেখানে গত শনিবার পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৫০ সেণ্টিমিটার ওপরে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা পারের নিম্নাঞ্চলের মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। পরিবারগুলো বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে এসে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবারের মাঝে উল্লেখযোগ্য ত্রাণ পৌঁছেনি। এলাকায় কিছু শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও অনেকের ভাগ্যে তা জোটেনি।
ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের জব্বার আলী বলেন, “চাইরদিন থাকি কোনো কাম কাইজ করির পাইছি না। ঘরত যা ছিল সব শেষ হয়া গেইছে। চেয়ারম্যান মেম্বারের ঘর হামাক কিছুই দেয়ছে না। ছাওয়া পাওয়া নিয়া কষ্টে আছি।” পশ্চিম বাইশ পুকুর গ্রামের বশির উদ্দিন (৬৫) বলেন, “গ্রামের চারি দিকে শুধু পানি, মানুষ জনের বাড়িঘর বানের (বন্যার) পানিত তলে আছে। কোন কাজ কাম নাই, কাহো কাজত নেছে না। আয় রোজগার নাই, সরকারি সাহায্যও নাই, কষ্টে দিন যাচ্ছে।”
একই কথা বলেন ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের সাইদুর রহমান (৪০) ও মফদ্দী মামুদ (৬০)।
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, “আমার ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সংখ্যা এক হাজার পাঁচ শত। এখন পর্যন্ত ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। বরাদ্দ না পাওয়ায় সকলকে দেয়া সম্ভব হয়নি। ১১ দশমিক ৭০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। সোমবার ওই চাল বিতরণ করা হবে।”
ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবার ১৫ কেজি করে চাল পাবেন বলে জানান তিনি।
পশ্চিম ছাতনাই ইউনি পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, তার ইউনিয়নের ৯০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার সকালে তিনশ পরিবারের মাঝে তিনশ প্যাকেট শুকনা খাবর বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৮৯২ পরিবারের জন্য ১৩ দশমিক ৩৮ মেট্টিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
“আগামী কাল (সোমবার) প্রত্যেক পরিবারের মাঝে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।”তিনি আরও বলেন, বন্যায় মানুষ যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল। সরকারে ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।”
একই উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলেও মানুষজন কাজে যেতে না পারায় সমস্যা হচ্ছে। আমার ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা এক হাজার ৬৫টি। গত দুই দিনে তিন শত প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি সোমবার বিতরণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শাহিনুর আলম বলেন, শুক্রবার দুপুরের এবং শনিবার সকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব কবির বীন আনোয়ারের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেন।
“বন্যা কবলিতদের জন্য ডিমলা উপজেলায় শনিবার পর্যন্ত দুইশত মেট্রিক টন চাল, আড়াই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও দুই লাখ টাকা এবং জলঢাকা উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমাদের হাতে ত্রাণ মজুত আছে এবং আরও পাঁচ লাখ টাকা, পাঁচ শত মেট্রিক টন চাল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবারের চাহিদা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।”