আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে তার বাবা ও বাদশাহ সালমানের মতবিরোধ বাড়ছে বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলেছে,সম্প্রতি ইয়েমন যুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নীতি নির্ধারণে যুবরাজের সঙ্গে বাদশাহর মতবিরোধ বেড়েছে। তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ জড়িত বলে অভিযোগ ওঠার পর থেকে এই মতবিরোধ বা দূরত্বের সূত্রপাত।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে পিতা-পূত্রের এই দ্বন্দ্ব নাটকীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে। ওই মাসে মিশর সফরকালে ৮৩ বছরের বাদশাহকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টারা তাকে সতর্ক করেছিলেন। বাদশাহর ওপর হামলার আশঙ্কায় পারিষদরা দ্রুত নতুন নিরাপত্তা টিম নিয়োগ দেয় এবং মিশর থাকা অবস্থাতেই একান্ত অনুগত ৩০ জনেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে রিয়াদ থেকে কায়রো পাঠানো হয়। একইসঙ্গে সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা টিমটিকে সৌদি ফেরত পাঠানো হয়। ওই টিমে যুবরাজের অনুগত কয়েকজন সদস্য থাকায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিরপত্তার বিষয়ে বাদশাহর অনুগতরা এতোটাই উদ্বিগ্ন ছিলেন যে মিশরের পক্ষ থেকে সফরকালে নিরাপত্তা কর্মকর্তা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মিশর সফর থেকে ফেরার পর বাদশাহকে অভ্যর্থনা জানানোর যে প্রতিনিধি দলটি ছিল সেই তালিকায় যুবরাজের নাম ছিল না। মূলত যুবরাজকে তিরস্কারের জন্যই তালিকা থেকে তার নামটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
মিশর সফরকালে যুবরাজকে ‘উপ-বাদশাহ’ উপাধি দিয়ে রাজকীয় কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন বাদশাহ সালমান। উপাধিটি প্রথাগত হলেও ওই সময় যুবরাজ দুটি নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি প্রিন্সেস রিমা বিনতে বন্দর বিন সুলতানকে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত এবং ভাই খালিদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বাদশাহকে বিষয়টি অবহিত না করেই এ বিষয়ে ফরমান জারি করেছিলেন যুবরাজ।
রাজকীয় ফরমানগুলো সাধারণত বাদশাহর নামেই জারি করা হয়। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি জারি করা ওই ফরমানে ‘উপ-বাদশাহর’ স্বাক্ষর ছিল, যা গত কয়েক দশকে রাজপরিবারে করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ পদে দুটি নিয়োগের বিষয় বাদশাহ ও তার পারিষদরা জানতে পেরেছিলেন টেলিভিশনের খবরের মাধ্যমে।
যুবরাজের এই ফরমানে বাদশাহ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে বয়সের বিবেচনায় খালিদকে অনেক বেশি দায়িত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় বাদশাহের ক্ষোভের মাত্রাটি ছিল বেশি।
তবে বাদশাহ ও যুবরাজের এই দ্বন্দ্বের বিষয়টি অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি দূতাবাস। ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘মতবিরোধের যে কোনো ধরণের পরোক্ষ ইঙ্গিত ভিত্তিহীন।’