এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে : আলোচনায় বক্তারা
সমাধান প্রতিবেদন : দেশে এখন একটা নির্মমতার চাষ হচ্ছে, ভয়ের সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন, এখন মাদক নিয়ে অভিযান হচ্ছে, এর পর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটবে। আরো কিছু ঘটনা চলতেই থাকবে। এ রকম অভিযান ও ক্রসফায়ার-মৃত্যুর মহড়া চলবে। এর মধ্যে নাকি ভোট সাজাবার ব্যবস্থা করা হবে। একটা মৃত্যু উপত্যকার মধ্যে নির্বাচনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের ইফতার মাহফিলে বক্তারা। : গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় নবগঠিত রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর এশিয়া হোটেল এন্ড প্যাসিফিক হলে নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্য এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে গণতন্ত্রকে যেভাবে লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মানুষের অধিকারগুলোকে যেভাবে হরণ করা হয়েছে, আজকে কেউ নিরাপদ নই আমরা। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। আমি শুধু একটি আহবান জানাতে চাই, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে যে কথাটি বলে গিয়েছিলেন সেই কথাটি হচ্ছে- আজকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করবার জন্য আমি সকল দলের প্রতি, সকল নেতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি। : বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী আজকে কারাগারে। আমরা জানি যে, এই কারাগারে থাকার কারণটা কী? একমাত্র কারণ হচ্ছে তাকে এই সরকার ভয় পায়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অতীতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাকে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে অভিহিত করেছে। দেশনেত্রীর মুক্তি ছাড়া দেশে নির্বাচনের চিন্তা করাও আমি মনে করি সঠিক হবে না। আমি বলতে চাই, যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটি কোনো ব্যক্তি, কোনো দলের নয়, এটি দেশ ও সমগ্র জাতির। একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে যে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন এবং সংসদকে ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন হতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত দেশে কোনো অর্থবহ নির্বাচন হবে বলে আমি অন্তত মনে করি না। : যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তির একটাই পথ- আমাদেরকে জাগিয়ে দিতে হবে, আমাদের পেছনে সংগঠিত হতে হবে, আমাদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভবিষ্যতে দেশে যারাই ক্ষমতায় আসতে চায় তারা যেন বুঝে শুনে চলেন। তারা যাতে বুঝতে পারেন জনগণ দুর্নীতিকে ঘৃণা করে। দুর্নীতি আমরা সহ্য করতে রাজি নই। অনেক সহ্য করেছি আমরা আর সহ্য করবো না। কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা দেখেছি, সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা হয় না, হাইকোর্টের ভেতরে রায় মানা হয় না। রায়ের অধীনে যে বক্তব্য দেয়া হয়, সেই বক্তব্যে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয় না। হাজার হাজার মানুষ জেলের ভেতরে আছে। কতদিন চলবে এগুলো। আমরা সহ্য করতে রাজি না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এই জাগরণের সাথে আমরা থাকবো। : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, পতাকা উড়িয়েছি, জাতীয় সঙ্গীত দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করেছি। এভাবে দেশ চলতে আর দেয়া যায় না। আমাদের ট্রায়াল চলছে। জনগণ নিয়ে আমরা রুখবো এই স্বৈরাচার। : নাগরিকের এই ইফতারে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে এখন একটা নির্মমতার চাষ হচ্ছে, ভয়ের সংস্কৃতি চালু করবার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, এখন মাদক নিয়ে অভিযান হচ্ছে, এর পর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটবে। আরো কিছু ঘটনা চলতেই থাকে। এরকম অভিযান ও ক্রসফায়ার-মৃত্যুর মহড়া চলবে। এর মধ্যে নাকি ভোট সাজাবার ব্যবস্থা করা হবে। আমি মনে করি, এটা একটা মৃত্যু উপত্যকা। এটা একটা মরণদ্বীপ। আজ নিজেদের মধ্যে যত সব ছোটখাটো সমস্যা আছে সেই কথা বলে বিভেদ বাড়াবার অবকাশ নেই। এরকম পাখির মতো করে যখন মানুষ মারছে তখন সকলে আমরা যাতে বেঁচে থাকতে পারি, মানুষের মতো স্বাভাবিক মৃত্যুর নিরাপত্তা পাই সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এই ইফতারে আমন্ত্রণ জানানোর কথা উল্লেখ করে মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন কাউকে ছাড়বো না যদি প্রমাণ পাই সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। এই ৬৪টা লোককে গুলি করে মেরেছে প্রথম দাবি করছি তাদের নাম-ঠিকানা পত্র-পত্রিকা-মিডিয়ায় প্রকাশ করা হোক, এদের নামে কী কী অভিযোগ আছে তা বলা হোক, তাদের নামে কী কী মামলা আছে তা বলা হোক। এই মামলার কি প্রমাণ আছে সেটাও বলা হোক। প্রমাণ ছাড়া যদি বদির চুলও ধরা না যায়, তাহলে প্রমাণ ছাড়া ৬৪ জনকে যে হত্যা করেছেন অপেক্ষা করেন দিন আসবে এই রোজার মাসে মধ্যে আমি বলি-কাউকে ছাড়বো না। এদেরকে সমস্ত অন্যায়ের জবাবদিহি করতে হবে এবং তাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আপনারা গুলি করে মারবেন আর গুলি করে হত্যার নীতিতে বিশ্বাস করি না কিন্তু ছেড়ে দেয়া যাবে না। : গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিকল্পধারার অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ হয়। এই জোটে বিকল্পধারার সঙ্গে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আবদুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিলল্পধারার মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম, সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপির মনজুর হোসেন ঈসা, জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত, সোনার বাংলা পার্টির শেখ আবদুর নূর, নাগরিক ঐক্যের ফজলুল হক সরকার, মোমিনুল ইসলাম, জিল্লুর চৌধুরী, মাহবুব মুকুল, খন্দকার সেলিম, আতিকুর রহমান, জাহেদ-উর-রহমানসহ নেতৃবৃন্দ ইফতারে অংশ নেন।