অপরাধ

এসআই আকবরের ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ দুটি ভিডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশের এসআই আকবর হোসেনের স্থানীয়দের কাছে দেওয়া ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ দুটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। এ সব ভিডিওতে তিনি কীভাবে ভারতে পালিয়ে গেছেন, কেন গেছেন এবং রায়হানের মৃত্যুর দিনে নির্যাতনের বিষয় উঠে এসেছে তারই জবানিতে।

সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে টাকার জন্য রায়হান আহমেদকে (৩৩) নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিলেট কোতয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলায় ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে তার স্বামীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ আনেন তিনি। এরপর থেকে ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন গা-ঢাকা দেন।

পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে রায়হানের মৃত‌্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে রায়হানকে নির্যাতন ও মৃত্যুর প্রাথমিক সত্যতা পায় ওই কমিটি।

সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে এসআই আকবরকে গ্র্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশই বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করেছে। ‘বিশ্বস্ত কিছু বন্ধু’ আকবরকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।

তবে দুপুরের পর থেকে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আকবরকে কয়েকজন যুবক দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে দেখা যায়। দুটি ভিডিওচিত্রেই আকবরকে ওই যুবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতেও দেখা গেছে। এ সময় এসআই আকবর পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হানকে ‘একা মারেননি’, ‘৫-৬ জন মিলে মারায় সে মরে গেছে’ এবং ‘সিনিয়র এক অফিসারের পরামর্শে ভারতে পালিয়েছিলেন’ বলে তাদের কাছে স্বীকারোক্তি দেন।

কানাইঘাটের সীমান্ত এলাকার বেশ কয়েকজন বলেন, ভিডিওতে যাদের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, সেই কথাবার্তায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়াদের উচ্চারণ ভঙ্গি রয়েছে।

২ মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়- আকবর হোসেনের মুখে চাপদাঁড়ি, গলায় মালা। তাকে পায়ে ও কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমন সময় কোন অপরাধে রায়হানকে মারা হলো- জানতে চাইলে আকবরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি খুনি না। আমি মারিনি ভাই, আমি ইচ্ছা করে একা মারিনি। তারে মারতেছিল ৫/৬ জন। এ জন্য সে মরে গেছে ভাই।’

তখন প্রশ্ন করা হয়, ‘কে মরছে, মরছে কে?’
আকবর বলেন, ‘একটা ছেলে।’

ফের প্রশ্নকর্তা জানতে চান, ‘বয়স কত হয়েছে ছেলের?’
আকবরের উত্তর, ‘৩২ হবে’।

এরপর প্রশ্নকারী বলেন, ‘সে কিতা জুলুম করছিল?’
আকবর উত্তরে বলেন, ‘চিনতাই (ছিনতাই) করছিল, চিনতাই।’

‘কিসের ছিনতাই করছিল’- প্রশ্নকর্তার এমন প্রশ্নের জবাবে আকবর বলেন, ‘টাকা ছিনতাই করছিল।’

তখন প্রতিউত্তরে ভেসে আসে, ‘তার জান তোমরা ছিনে লিস (ছিনিয়ে নিয়েছ)।’
তখন আকবর বলেন, ‘আমরা জান নেই নাই। আমরা হাসপাতালে নিয়েছি। পাবলিক মারছিল, আমরা হাসপাতালে নিয়েছি। কিন্তু ওখান থেকে মরে গেছে।’

‘তুমি হাসপাতাল নিয়া গেছ। তাইলে তুমি কিতার লাগি ভাগছে’- এমন প্রশ্ন করেন আরেকজন। এর উত্তরে আকবর বলেন, ‘আমি ভাগে আসছি যে সাসপেনশন (বরখাস্ত) করছে, অ্যারেস্ট করতে পারে। বলেছে যে, দুই মাস পর ঠান্ডা হয়ে যাবে, দুই মাস পর ঠান্ডা হয়ে গেলে এটা হ্যান্ডেল করা যাবে। আমি অন্য কোনো কারণে ভাগি নাই।’

এরপর সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের কথাবার্তা ভেসে আসে ভিডিওতে। এরপরই আকবর বলেন, ‘আমরা জান নেই নাই ভাই।’

‘এর লাগি তো ভাগছ’- এমন প্রশ্ন করেন আরেকজন।
এর জবাবে আকবর বলেন, ‘আমার এক সিনিয়র অফিসার বলছিল, তুমি আপাতত চলিয়া যাও, কয়দিন পরে আইস। দুই মাস পরে মোটামুটি একটু ঠান্ডা হয়ে যাবে।’

তখন ফের একজন বলেন, ‘তুমি ভাগতে পারে না।’ এরপর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের স্থানীয় ভাষায় কথাবার্তাও শোনা যায়। পরে একজন বলেন, ‘তুমি ইন্ডিয়া কেমনে আইলে, ধরা কেমনে খাইলে?’
জবাবে আকবর বলেন, ‘ইন্ডিয়ার একটা পরিবার আমাকে বলছিল যে গেলে এখানে থাকার জায়গা পাবে। মাঝের গাঁও এখানে, ভোলাগঞ্জ।’ এরপরই ভিডিওটি শেষ হয়ে যায়।

এদিকে, ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের অপর এক ভিডিওতে দেখা যায়, আকবরকে একটি পাহাড়ি ছড়ায় পাথরের ওপর বসিয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধছেন একজন। এ সময় স্থানীয় কিছু মানুষ তার পরিচয় জানতেও চান। তখন তারা তাকে পানি পান করার জন্য বোতল দেন। তখন আকবর হাতজোড় করে কাঁদছিলেন। না বাঁধার জন্য অনুরোধও করছিলেন।

এ সময় একজনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ‘নাম কিতা, ওই, নাম কী তোমার?’ তখন আকবর জবাব দেন, ‘আলী আকবর’।

একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই মারবার অধিকার পাইলে কই?’ আরেকজন বলেন, ‘ওউ ফুয়া যেগু মারছে অগুনি। রায়হান হত্যার। নেটে দেখছিলাম।’
তখন আকবর বলেন, ‘আমি সাথে সাথে হাসপাতালে পাঠাইছি। আমি মারি নাই ভাই, আমি মারি নাই।’

আরেকজন বলেন, ‘১০ হাজারের লাগি তোরা মানুষ মারস রে।’ এরপর আকবরকে নিয়ে চূড়ার দিকে ওঠে যান স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *