রাজনীতি

শহীদদের স্মরণে ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাংবাদিকদের আলোচনা সভা

 

জয়নাল আবেদীন রিটন:
ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের উদ্যেগে ভৈরব মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। আজ ১৯ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে স্হানীয় পানাউল্লারচর বধ্যভূমিতে আয়োজিত মুক্ত দিবস আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও যুগান্তর যমুনা টিভির ভৈরব প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান ফারুক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন ভৈরব প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান বাচ্চু, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ডিপুটী কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজ আমিন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মোঃ সুমন মোল্লা, চ্যানেল -২৪ ভৈরব প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন, জিটিভির ভৈরব প্রতিনিধি হালিম মোল্লা, মানবকন্ঠের ভৈরব প্রতিনিধি মোঃ আক্তারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মধ্য উপস্হিত ছিলেন সত্যজিৎ দাস ধ্রুব, আলহাজ্জ মোঃ সজীব আহমেদ, জয়নাল আবেদীন রিটন, ফজলুল হক বাবু, নজরুল ইসলাম রিপন, ওয়াহিদা রহমান পলি, রাহাত ভূইয়া সবুজ, শাহিনুর, জামাল উদ্দিন, মিলাদ হোসেন অপু, রাজীবুল হাসান।
সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন মোল্লা, এম এ হালিম, মোঃ আক্তারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে স্মৃতিময় কথাগুলি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ডিপুটী কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ আহমেদ মুক্তযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। এসময় তিনি পানাউল্লারচর এলাকায় ৭১ সালে কিভাবে নিরীহ মানুষকে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেন তার বর্নণা দেন। তার বাবাকে রাজাকাররা কিভাবে কখন হত্যা করেন একথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। আবেগজড়িত কান্নার কারনে তিনি আর বক্তব্য দিতে পারেননি।
শহীদ পরিবারের সন্তান সাংবাদিক সুমন মোল্লা বলেন, বধ্যভূমিটি নির্মানে সাংবাদিকদের অবাদান অপরিসীম। ১৯৭১ সালে পানাউল্লারচরে গণহত্যায় প্রায় ৫ শ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হলেও স্বাধীনতার পর ৩০ বছর পর্যন্ত এই জায়গাটি অবহেলিত ছিল। তারপর সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনকে একথা স্মরণ করিয়ে দিলে আজকের বধ্যভূমি নির্মান করে। সমাজের নানা কাজে সাংবাদিকদের ভূমিকা কম নয় বলে তিনি জানান।
মোস্তাফিজ আমিন বলেন, বধ্যভূমির জায়গাটি জিন্নত আলী মিয়া বিনা টাকায় দান করেছেন। ভৈরবে অনেক ধনী ব্যক্তি থাকলেও এরকম মহৎ কাজে কেউ জায়গা দান করে নাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিকথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে অধ্যাপক শামসুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ১৯৭১ সালে আমি বাম রাজনীতি করতাম। তৎসময়ে আমার সহকর্মীরা আমাকে ভয় দেখিয়ে বলত, ভারত গেলে আ,লীগের নেতারা আমাকে মেরে ফেলবে। একারনে আমি ভয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধে না যাওয়াটা আমার ভুল ছিল। তিনি বলেন আমি মুক্তিযুদ্ধে না গেলেও মুক্তিযোদ্ধারা দেশে প্রবেশ করলে তাদেরকে প্রতিনিয়ত সহযোগীতা করেছি। আজ এই আয়োজন করায় তিনি ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। এসময় তিনি সাংবাদিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে অনুরোধ করেন।
সিনিয়র সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ফারুক তার বক্তৃতায় বলেন, একদিনের তরিৎ আয়োজনে অনুষ্ঠানে যারা আজ উপস্হিত হয়েছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। ভৈরব মুক্ত দিবসটি অনেক গুরুত্বপূর্ন কিন্ত প্রতিবছর এইদিনে প্রশাসন বা রাজনীতিবিদরা দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে তারা পালন করেনা। পানাউল্লারচর এলাকায় ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকসেনারা গণহত্যায় ৫ শ নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এদিন হানাদারদের গুলিতে কয়েশ মানুষ এখানে আহত হয়েছিল। অথচ অনেকেই এসব কথা জানেনা। আজকের বধ্যভূমি নির্মান করার বিষয়ে সাংবাদিকদের অবদান অনেক বেশী। আজ থেকে ১৬ বছর আগে আমি নিজেসহ , সাংবাদিক আবদুল্লাহ – আল মনসুর, মোস্তাফিজ আমিন, সত্যজিৎ দাস ধ্রুব প্রথম প্রস্তাব করেছিলাম তৎকালীন ইউএনও হুমায়ূন কবির ও খোরশেদ আলমকে। তারপর রাজনীতিবিদদেরকে বিষয়টি অবগত করলে তারা বধ্যভূমি নির্মানে উদ্যোগ গ্রহন করে। তখন ভৈরবের ব্যবসায়ী ও আ,লীগ নেতা মরহুম জিন্নত আলী মিয়া জায়গাটি দান করতে সম্মত হয়েছিল। বধ্যভূমিতে যাতায়তের রাস্তাটি আজও পাকা রাস্তা হয়নি যা দুঃখজনকবলে তিনি জানান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও হানাদার বাহিনী, রাজাকারদের অত্যাচার নিপিরীণ স্বচক্ষে দেখার কিছু বর্নণা দেন তিনি।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক মোস্তাফিজ আমিন। তারপর ৭১ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া পড়ানো শেষে বিকাল ৫ টায় অনুষ্ঠানটি সমাপ্তি ঘোষনা করেন সভাপতি আসাদুজ্জামান ফারুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *