জীবনযাপন

মুরাদনগরে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় স্ত্রীকে ভিটে ছাড়া করলো পাষন্ড স্বামী

মো. নজরুল ইসলাম, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার মুরাদনগরে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার এক গৃহবধূকে তালাক দিয়ে ভিটে
ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে পাষন্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। সাত মাসের এক শিশুসহ
তিনটি কন্যা সন্তান নিয়ে এখন প্রতিবেশির রান্নাঘরে গত ৭দিন ধরে মানবেতর
জীবনযাপন করছেন তিনি। উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের বাবুটিপাড়া
গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে।
বাসস্থানহারা গৃহবধূ রোজিনা দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী গ্রামের মৃত দুধ
মিয়ার মেয়ে। অভিযুক্ত আলিম বাবুটিপাড়া গ্রামের মৃত আছমত আলীর ছেলে।
জানা যায়, ২০১০সালে দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী গ্রামের মৃত দুধ মিয়ার
মেয়ে রোজিনা আক্তারের সাথে বাবুটিপাড়া গ্রামের মৃত আছমত আলীর ছেলে
আলিম পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের
তিনটি কন্যা সন্তান হয়। তৃতীয় সন্তানটিও কন্যা হওয়ায় হাসপাতালে থাকা
অবস্থায় সিজার হওয়ার তিন দিন পরেই রোজিনার স্বামী আলিম রোজিনাকে তালাক
দেওয়ার কথা বলে। পরে সামাজিকভাবে মীমাংসা করে রোজিনাকে তার স্বামীর ঘরে
পাঠানো হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে রোজিনার স্বামী, ভাসুর হালিম হুজুর ও
ভাসুরের স্ত্রী ফাহিমা আক্তার মিলে বড় মেয়েটিকে আটকে রেখে ছোট দুই কন্যা
সন্তানকে সাথে দিয়ে তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে এলাকাবাসীর পরামর্শে
রোজিনা স্থানীয় সমাজকর্মী ফাহিমা আক্তারের শরনাপন্ন হয়। ফাহিমা আক্তার দুই
মেয়েসহ রোজিনাকে তার বাড়ীতে আশ্রয় দিয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে বিষয়টি
মীমাংসা করার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন।
ভিকটিম রোজিনা আক্তার বলেন, বিয়ের আগে আমি আট বছর বিদেশে ছিলাম।
বিদেশে থাকা অবস্থায় ভালো টাকা আয় করি । বিয়ে পর কয়েক ধাপে প্রায় ২২ লক্ষ
টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেই বাড়িতে বিল্ডিং করার জন্য। বিল্ডিং করার পর আমার
ভাসুরের স্ত্রীর সাথে আমার স্বামীর অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারি। তখন
আমার স্বামী, ভাসুর হালিম হুজুর ও ভাসুরের স্ত্রী ফাহিমা সহ সকলে মিলে আমাকে
বাড়ি থেকে বের করার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে থাকে। গত ৭
মাস আগে আমার আরো একটি কন্যা সন্তান হলে আমাকে একটি ভুয়া একটি
তালাকনামা পাঠায়। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মীমাংসা করে আমাকে আবার
আমার স্বামীর বাড়িতে পাঠায়। আমার স্বামী আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে কোন
কিছু না দিয়ে ভাসুরের স্ত্রীকে ফ্রিজ, টিভি, শোকেসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র
কিনে দেয়। এমনকি ভাসুরের স্ত্রীর রুমে এসিও লাগিয়ে দিয়েছে। আমি
প্রতিবাদ করায় আমার স্বামী ভাসুর ভাসুরের স্ত্রী সহ সকলে মিলে আমার বড় মেয়ে
হাবিবাকে ঘরে আটকে রেখে আমার দুধের সন্তানসহ আমাকে এক কাপড়ে ঘর
থেকে বের করে দেয়। আমি মুরাদনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।
রোজিনা আক্তার বাচ্চাদের কোলে নিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, আমি
আমার সন্তানদের বাবার এবং আমার স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমি আমার
বড় মেয়েকে ফিরে পেতে চাই।
এববিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলীমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও কথা বলা
সম্বব হয়নি।
বাবুটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো আরমান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি।
সোমবারে উভয় পক্ষকে নিয়ে মিমাংসা করে দেয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসিম
বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষনিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি
স্বামী স্ত্রীর তালাক সংক্রান্ত বিষয়। ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় ভাবে বিষয়টি
মিমাংসার দায়িত্ব নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *