মার্কিন নির্বাচনের আগে ও পরের দিন সহিংসতা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সরকার। পুলিশ বাহিনী সহিংসতার আগাম তথ্য পাওয়ার পর এই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে ।
এর আগে কখনো নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার এমন পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। ২৫ অক্টোবর ম্যানহাটনে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে ট্রাম্পবিরোধীদের সহিংস সংঘর্ষ দেখে হতবাক হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে বড় বড় নগরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
নির্বাচনের আগে রেকর্ড পরিমাণে প্রায় ৫০ লাখ মার্কিনি আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছেন। এ বছর শুধু মার্চেই বিক্রি হয়েছে অন্তত ২০ লাখ ব্যক্তিগত অস্ত্র। ২০১২ সালের পর দেশটিতে এক মাসে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রির রেকর্ড এটি। বিশ্বজুড়ে সাধারণ জনগণের অস্ত্র মালিকানায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে অস্ত্র বিক্রি বাড়ায় ওয়ালমার্ট আমেরিকা নিজেদের স্টোর থেকে সব অস্ত্র ও অস্ত্রজাত সামগ্রী সরিয়ে রেখেছে।
সর্বশেষ জনমত জরিপ মতে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৮ ভাগ এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্প যদি পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান, তবে ক্ষমতার লড়াই আদালতে পর্যন্ত গড়াতে পারে। সেই সঙ্গে রাজপথে সহিংসতাও ছড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প নিজের কট্টর ডানপন্থী ও চরমপন্থী সমর্থকদের যে কোনো মুহূর্তে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।
করোনাভাইরাস, শাটডাউন, বর্ণবাদী সহিংসতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে পূর্ববর্তী যে কোনো বছরের তুলনায় এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে। ভাইরাসের প্রকোপে দেশজুড়ে যখন কড়া লকডাউন, জনমানবশূন্য রাস্তাঘাট তখন অস্ত্রের দোকানগুলোতে ছিল মানুষের লম্বা সারি। দোকান খোলার আগেই এসে উপস্থিত হতে দেখা যায় অনেককে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে দেশটিতে বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। এতে দেখা দিয়েছে অপরাধ বৃদ্ধির শঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য ব্যক্তিগত অস্ত্রের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাধারণ মার্কিনরা।
এছাড়া সহিংসতার বিষয়ে বারবার সতর্ক করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও।
ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরে যান তবে তিনি ওভাল অফিস (প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) ছেড়ে যাবেন না। এটি তিনি এরই মধ্যে কয়েকবার গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন তাকে ভোটে কারচুপি ছাড়া হারানো সম্ভব নয়। এটি যদি সত্যিই হয় তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে। তখন সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে। যেটি দেশটিকে ভয়াবহ কোনো পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। এসব সংঘর্ষকে তীব্র রক্তক্ষয়ী করে তুলবে এসব ব্যক্তিগত অস্ত্র।
গত সপ্তাহে আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন ও ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট এবং মিলিশিয়া ওয়াচের যৌথভাবে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি রয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে ৯টি গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে বলা হয়েছে প্রাউড বয়েজ, প্যাট্রিয়ট প্রেয়ার, ওথ কিপার, লাইট ফুট মিলিশিয়া, সিভিলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স, আমেরিকান কনটিনগেন্সি, বোগালো বোয়েসের মতো সক্রিয় সশস্ত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনের আগে-পরে দাঙ্গা ও সহিংসতা বাধাতে পারে। ইতোমধ্যে এসব গোষ্ঠী প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে।