রিপোর্ট : রফিকুল ইসলাম রুবেল!!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন জংশন এখন চোর, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি, মিনি পতিতাবৃত্তি সহ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন চুরি, ছিনতাই পকেটমারের মত ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার, মানিব্যাগ সহ মূল্যমান জিনিস প্রতিদিনই খোয়া যাচ্ছে যাত্রী সাধারণের ।
দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভৈরব রেলওয়ে জংশন। যাত্রী ভীড়ে এসব অপরাধমূলক ঘটনা যেন নিত্যদিনের সংঙ্গী। রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করলেও এসব অপরাধমূলক ঘটনা রোধে কার্যকর কোন তৎপরতা দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা সদস্যরা বলছে তাদের কাছে তেমন কোন অভিযোগ নিয়ে যায়না ভুক্তভোগী যাত্রীরা, কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তবে রেলওয়ে পুলিশ ও স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে অপরাধীদের সখ্যতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অনেক ভুক্তভোগী যাত্রী।
ভৈরব জংশন স্টেশন থেকে ৬টি রোডে ২২টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ২৮টি ট্রেনে চলাচল করে প্রতিদিন মোট ৮ থেকে ৯ হাজার যাত্রী।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ভৈরব একটি জংশন স্টেশন। স্টেশনটি এখন অপরাধীদের দখলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী এবং ভৈরব-ময়মনসিংহ লাইনে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন এই স্টেশনে ২৮টি আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়। ভৈরব ছাড়াও একই জেলার কুলিয়ারচর, বাজিতপুর ও কটিয়াদী, পার্শ্ববর্তী জেলার আশুগঞ্জ, নবীনগর, সরাইল ও রায়পুরা উপজেলার যাত্রীরা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে এই স্টেশন থেকে ট্রেনের আরোহী হন। দিনরাত এই স্টেশনে থাকে যাত্রীদের সরব উপস্থিতি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বাইরের এলাকার যাত্রীরা ট্রেনের আরোহী হওয়ার সময় অপরাধীদের দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছেন। কেউ খোয়াচ্ছেন মানিব্যাগ, কেউ মুঠোফোন, কেউ আবার স্বর্ণালংকার। একটি চক্র ট্রেনের ওঠানামার সময় ভিড়কে পুঁজি করে যাত্রীদের পকেটে মাদকদ্রব্য ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। ভুক্তভোগীরা পুলিশে অভিযোগ করে সুফল পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী দৈনিক ভোরের ডাক কুলিয়ারচর সংবাদদাতা সাংবাদিক নূর নবী ভূইয়া সমাধান টিভি কে বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারোসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে থামে সকাল ৮ টায়। ট্রেনে ওঠার সময় তিনি টের পান প্যান্টের পকেটে কেউ একজন হাত দিয়েছেন। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পান এক ব্যক্তি মোবাইল ও মানিব্যাগটি নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছেন।
এরই মধ্যে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়। পরে তিনি ভৈরব রেলওয়ে পুলিশকে বিষয়টি অভিযোগ আকারে অবগত করে প্রতিকার চান।
আরেক ভুক্তভোগী ভৈরব উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেন বলেন গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যাত্রা পথে আমার মেয়ের জামাতার পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে চোর ট্রেন থেকে নেমে যায়। চোরকে আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। কিন্তু দুঃখ লাগছে, স্টেশনে যাত্রীর চেয়ে বহিরাগত লোকজনের সংখ্যাই বেশি। আসলে ভৈরব রেলস্টেশনের পরিস্থিতি ভালো নয়। এই নিয়ে কী করা যায়, ভৈরবের সচেতন মহলকে ভাবতে হবে।
এমন অনেক ভুক্তভোগীই আছেন লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়গুলো প্রকাশ করতে চান না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ট্রেনগুলো স্টেশনে প্রবেশের সাথে সাথেই পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী (RNB) সদস্যরা বিনা টিকিটের যাত্রীদের গেইট পাস করা ও ট্রেনের টিটি ও গাডদের কাছে টাকার বিনিময়ে বিনা টিকেটের যাত্রী তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সুযোগে যাত্রীদের মোবাইল, মানিব্যাগ,স্বর্ণালংকার, টাকা পয়সা সহ মূল্যবান জিনিস চুরি করে নিরাপদে চলে যায় চোর ও ছিনতাই চক্রের সদস্যরা।
ভৈরব রেলওয়ে থানার দায়িত্বরত এক অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যাত্রীদেরকে আমাদের প্লাটফর্মে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিরাপত্তা দিতে সচেষ্ট আমরা ,পাশাপাশি স্টেশন এলাকায় মাদক নিরমূলে ২৪ ঘন্টায় কাজ করছি । সকাল থেকে ভোর পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি চুরি ছিনতাই কমে আসবে।
ভৈরব রেলওয়ে আর এন বি এর অফিসার ইনর্চাজ এস এম তাজবীর এর সাথে প্রতিবেদক একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি।