অপরাধ

ভৈরবে বিসিকে জমিদাতারা ঘুষের বিনিময়ে পেল টাকা

মোশারফ হোসেন শ্যামল ,বিশেষ প্রতিনিধি : বন্দরনগরী ভৈরব সড়ক, রেল ও নৌ পথের জংশন হিসেবে পরিচিত । এখানে রয়েছে শত শত ছোট-বড় মিল-ফেক্টরী, কল-কারখানা। রাজধানী ঢাকা শহরের পরেই এই বন্দরে গড়ে ঊঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাদুকা শিল্পের বাজার। ভৈরব শহর থেকে মাত্র ৫কিলোমিটার উত্তরে উপজেলার কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নে বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সূত্র মতে, বিসিক বাস্তবায়নে ২০১১ সালের শেষের দিকে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। আর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা শেষ হয়। মোট ৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব জমির সেচ পাম্প, ফসল কিংবা অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতি পূরনসহ ভূমি ক্রয়ে বিসিক সর্বমোট ৪০ কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার ৯০৫.১৬ টাকা বরাদ্ধ দেয়। এই টাকা জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা অফিসের নামে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি প্রথম দফায় টাকা ছাড়ে ২৫ কোটি ৮০ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে বাকি ১৫ কোটি ১৮ লাখ ১২ হাজার ৯০৫.১৬ টাকা ছাড়ে। তাছাড়া ভর্তূকিসহ প্রতি শতাংশ ভূমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৯৯ হাজার ৫৯৪ টাকা। কালিকাপ্রসাদে এক বিঘা সমান ৩৫ শতাংশ ভূমি। সে হিসেবে প্রতি বিঘার মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু কোনো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকই পায়নি বিসিকি নির্ধারতি তাদের ভূমির সঠিক মূল্য। গড়ে প্রতি বিঘায় মূল্য পেয়েছেন তারা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। যদিও টাকার চেক থেকে কাটা হয়নি একটি টাকা। জমিদাতাদের জিম্মি করে চেক দেয়ার আগেই জমি দাতা কৃষকদের কাছ থেকে অগ্রীম ঘুষ নেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে উল্লেখ্যযোগ্য কৃষক হাজী মোঃ জাহের মিয়া (৬৮), আঃ রহমান (৩৫) জহির মিয়া (৪৫), জরিনা বেগম (৫০) রোকেয়া বেগম (৪৫) তাহমিনা ইসলাম (৪৫) জানান, তারা যে টাকা পেয়েছেন এই জন্যে ১০ থেকে ২০% পর্যন্ত অগ্রীম মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়েছে। এই ঘুষের টাকা কিশোরগঞ্জ জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা অফিসের কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ও পিয়নকে দিতে হয়েছে। যদিও সরাসরি কর্মকর্তার সেতাফুল ইসলাম নিজ হাতে এই টাকা নেননি। কিন্তু এই অফিসের সার্ভেয়ার আলী আহমেদ ও পিয়ন ফরিদা আক্তার নিজ হাতে গুণে গুণে অফিসের ওয়াশ রোমে টাকা নিয়েই পরে তাদের চেক দেন। এছাড়া এখনো অনেকে অগ্রীম ঘুষ দিতে না পারায় ও সামান্য ভূলত্রটির কারণে তাদের পাওনা টাকা পায়নি বলেও অভিযোগ করেন। কৃষকদের মতে, বিসিকে জমি দাতাদের টাকা আনতে অফিসের লোকজন নানা কৌশলে ঘুষ হিসেবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই টাকা জোগাড় করতে কেউ কেউ জমি বন্ধকসহ বিক্রি করেছেন হালের গরু ও স্বর্ণালংকার এমনকি সমিতি থেকে লোনও নিয়েছেন কেউ কেউ ।
জমিদাতাদের জিম্মি করে চেক দেয়ার আগেই জমি দাতা কৃষকদের কাছ থেকে অগ্রীম ঘুষ নেয়ার প্রতিবাদে গত ১২ আগষ্ট সকালে ঐ এলাকায় কালিকাপ্রসাদ সিদ্দিরচর রোডে প্রায় শতাধিক জমিদাতাগণ সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশে উক্ত দুর্নীতির বিষয়ে পত্রিকায় তুলে ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
এসব বিষয়ে গত ১৮ আগষ্ট কিশোরগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহন শাখার পিয়ন ফরিদা আক্তার প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে রাজি হন। কথা বলার সময় কখনো রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাম ভাঙ্গিয়ে আবার কখনো মানবিক কথা বলে মন গলাতে চান তিনি। তবে, ঘুষের টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। অভিযোগ অস্বীকার করেন সার্ভেয়ার আলী আহমেদও। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের দায়ে জেলে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রসাশক সারোয়ার মোর্শেদ চৌধুরীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে বিসিক শিল্পনগরীর মাটি ভরাটের কাজ। তাছাড়া এরই মধ্যে ৯৫% কৃষকদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আর কাগজপত্রে মালিকানা জটিলতায় বাকী রয়েছে মাত্র ৫% কৃষকের টাকা। এগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে দেয়া হবে। তবে, তার আমলে ঘটনাটি না ঘটায় তিনি ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতি প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তবুও বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা হলে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের, এই অঞ্চলের মানুষের বাড়বে আয়-রোজগার। একই সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আদায়। এমনটাই স্বপ্ন স্থানীয়দের দু’চোখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *