জয়নাল আবেদীন রিটন, বিশেষ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রথম বারের মত বানিজ্যিক ভাবে চাষ হল সৌদি আরবের “সাম্মাম বা রক মেলন” নামে পরিচিত ফল । মাষ্টার্স পাশ করা হৃদয় আহমেদ নামে এক যুবক কালিপুরের রামশংকরপুর গ্রামে তিন বিঘা জমিতে এই ফলের চাষ করেন। ফলনও খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রীবাহী পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় দুরদুরান্তের পাইকারগণ আসতে পারছেননা। ফলে লোকশানে পড়তে পারে এমনটাই আশংকা করছেন এই ফল চাষি।
সরেজমিনে গিয়ে সাম্মাম চাষি হৃদয় আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি জানান ,সাম্মাম সৌদি আরবের একটি জনপ্রিয় রসালো ফল । ভৈরবে এ ফলের চাষ করে এলাকাতে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বাংাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে এ ফলটা চিন ও থাইল্যান্ড থেকে প্রতি বছরই শত কুটি টাকার এ ফল বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এ চিন্তাধারা থেকে তিনি বাংলাদেশে এটার শূরু করেন।
তিনি এ বীজগুলি কালেকশান করেছেন ঢাকার এক কোম্পানী গার্ডেন ফর বাংলাদেশ থেকে । প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৫ গ্রাম হলেই চলে। তার এ ফল চাষের খবর পেয়ে সাম্মাম ফল দেখতে প্রতিদিনই লোকজন আসছেন তার জমিতে। দেখার পর অনেকেই এই ফল চাষে তাদের আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন। অনেকে আবার পরামর্শ ও নিচ্ছেন সাম্মাম ফল চাষ করবেন বলে। সাম্মাম উচ্ছ মূল্যের ফল। প্রতি কেজি দুই থেকে আড়াইশত টাকা দরে পাইকারি বিক্রয় হয় জমি থেকেই। পাইকাররা বাজারে ৪ শত থেকে ৫ শত টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রয় করে থাকেন বলে জানান ফল চাষি হৃদয় আহমেদ। হৃদয় আহমেদ ২০১৬ সালে মাষ্টার্স শেষ করে বেশ কিছুদিন চাকুরির সন্ধানে সময় পার করেছেন। পরে চাকুরির আশা ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের তার এক বড় ভাইরয়ের পরামর্শ নিয়ে নিজেই তিন বিঘা জমিতে সৌদি আরবের এই সাম্মাম বা রক মেলন নামে পরিচিত এ ফলের চাষ করেন। ফলনও খুব ভাল হয়েছে। সাম্মাম ফলের বাহিরের অংশ হলুদ আর ভিতরের অংশ লাল। পুষ্টি জাতিয় এই ফল খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি । এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। বীজ বপনের দু মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসে যা খাবার উপেযোগী। তিন মাসের মধ্যে এ ফল পরিপক্ক হয়। এ ফল দু ভাবেই চাষ করা যায়। এক জমিতে মাটির মধ্যে প্যাড তৈরি করে অথবা মাচা তৈরি করে । সাম্মামের চারা গজানোর পর মাচায় তুলে দিলে শিলা বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণেও ফলের তেমন একটা ক্ষতি হয়না। খবর পেয়ে ময়মনসিংহের ৭০ -৭৫ জনের মতএকটি টিম এসে আমার সাম্মাম ফলের চাষ পরিদর্শন করে গেছেন এবং আমাকে ভাল সুপরামর্শ দিয়ে গেছেন। আশা করছি করোনা সংকট কেটে গেলে এ ফল চাষে সাফল্য আসবে ।
অনার্সের দ্বতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাউছার বলেন, হৃদয় আহমেদ এখানে একটা উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করতেছে। কৃষি কাজের প্রতি আমাদের সবারই মন দেওয়া উচিত। এ কৃষি কাজের প্রতি যদি আমরা মনযোগ দিই তাহলে আমরা লাভবান হব। হৃদয় আহমেদের এ চাষ দেখে আমারও আগ্রহ বাড়ছে এ ফল চাষে। চিন্তা ভাবনা করছি লেখাপগার পাশাপাশি এটাও করব।
এলাকাবাসী মো ঃ রাব্বি মিয়া ঃ সাম্মাম একটা বিদেশি ফসল। এদেশে এটাই মনে হয় প্রথম। আমি এই প্রথম দেখলাম হৃদয় বাই একটা উচ্ছ শিক্ষিত মানুষ হয়ে যে এই সাম্মাম চাষে যে উদ্যোগ নিয়েছে আশা করি দেশের জন্য একটা গৌরব নিয়ে আসবে নতুন ফল হিসেবে। আমি মনে করি এ ফল চাষ করতে পারলে দেশের জন্য ও বেকার মানুষের জন্য বিরাট একটা সাফল্য নিয়ে আসবে।
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলম শরীফ খান বলেন, সৌদি আরবের সাম্মাম ফল খেতে সু-স্বাধু। এই ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ ফল শরীরের তাপমাত্র নিয়ন্ত্রনে রাখে। উচ্ছ মূল্যের এ ফল বিক্রি করে সে অনেক লাভবান হতে পারবে। তার দেখাদেখি আশপাশের অনেকেই আগামীতে এই সাম্মাম ফলের চাষে উদ্বুদ্ধও হয়েছেন ।