মোঃ ছাবির উদ্দিন রাজু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভৈরবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা পরিচালিত তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের ভৈরব উপজেলা কেন্দ্রের উদ্যোগে উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা ও ভাতা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের বঙ্গবন্ধু হলরুমে জাতীয় মহিলা সংস্থা, ভৈরব উপজেলা কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মেহের নিগার শিখার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এইসব অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভৈরব পৌরসভার মেয়র আলহাজ¦ ইফতেখার হোসেন বেনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী সেলিম খান, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সামসুন্নাহার তাসনিম।
জান্নাতুল মিশু ও তাজরিমুন ফেরদৌস অর্চির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার প্রধান প্রশিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক নিপা রহমান।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই প্রকল্পটি বৈশ^য়িক মহামারি করোনা ভাইরাসের সময় শুরু হয়। এই অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা আমাদের সবগুলো টার্গেট পূরণ করতে পেরেছি। এরমধ্যে ২৬টি ব্যাচে ৬৫০জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই প্রশিক্ষণার্থীদের প্রথম ধাপে ৩০ লাখ, ২৯ হাজার ৯৫০ এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৮শ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
এখানে নারীরা ফ্যাশন ডিজাইন, ইন্টেরিয়র, বিউটিফিকেশন ক্যাটারিং, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড ই-কমার্স, বেবি কেয়ার, হাউজ কিপিং ইত্যাদি বিষয়ে ৪০ ও ৮০ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলছেন এবং কর্মজীবনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে নারী নেত্রী মেহের নিগার শিখা বলেন, নারীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ক্ষমতায়ন ও সুশান নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশে সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ধারাবাহিকতায় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আত্ম-নির্ভরশীলতা অর্জনে উদ্ধুব্ধ ও সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি নারী সমাজকে মানব সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধনে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
পৌর মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী সমাজকে উন্নয়ন ধারার বাইরে রেখে দেশের কাংখিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই ভাবনা থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন ধারায় নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করছেন। তাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলে রাষ্ট্র গঠনের মূলধারায় ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন। ফলে নারীরা আজ পুরুষের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এই দেশের নারী সমাজ এক সময় নিজগৃহে আবদ্ধ হয়ে বাস করতেন। চলাফেরায় তাঁদের কোনো স্বাধীনতা ছিলো না। সাংসারিক কাজ আর সন্তান ধারণ-পালন ছাড়া অন্য কোনো কাজে তাদের ভূমিকা নিষিদ্ধ ছিলো। বাইরে গেলে/বাহনে চড়লে কাপড়ে আপাদমস্তক ঢাকা থাকতো।
এরও আগে ভারত-বর্ষে সতীদাহ প্রথা ছিলো। বিধবাকে তাঁর স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারা হতো। আয়ামে জালিয়াতের যুগে আরববিশে^ কন্যা সন্তান জন্ম নিলে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো।
কিন্তু সেই দিন বদলে গেছে। নারী এখন পুরুষের উন্নয়ন সহযোগী। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সামাজিকতায় নারী এখন প্রতিটি ভূ-খন্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদের বাদ দিয়ে, পাশ কাটিয়ে কোনো অঞ্চলের উন্নয়ন কল্পনাও করা যায় না।
আমাদের দেশে নারীদের উন্নয়নের মূল ধারায় ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। যোগ্যতানুসারে তাঁদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
তৃণমূল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, আর্থিক অনুদান, সহায়তা প্রদান করে এবং নারী উদ্যোক্তাদের ৪-৫ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা হচ্ছে।
আলোচনা শেষে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা নারীদের মাঝে ভাতার টাকা প্রদান করেন অতিথিরা।এসময় মিডিয়াকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুস্তাফিজ আমিন স্টাফ রিপোর্টার এনটিভি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরামের ভৈরব শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ছাবির উদ্দিন রাজু প্রমূহ।