মো: রফিকুল ইসলাম রুবেল:
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডীবের মোল্লাবাড়ি এলাকায় খালের পানিতে ডুবে মারা যায় নীরব মোল্লা (১২)। ভাইয়ের মৃত্যুশোক সইতে না পেরে নিজ ঘরের তিনতলা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন বড় বোন নাজা বেগম (১৮)। নীরবের মৃত্যুর পাঁচ ঘণ্টা পর মারা গেলেন বোনও।
নীরব মারা যায় সোমবার বিকেল চারটার দিকে। নাজা না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাত নয়টায়। পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে ভাই-বোনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানান,নীরব ও নাজার বাড়ি পৌর শহরের চণ্ডীবের মোল্লাবাড়ি। বাবা বাছির মোল্লা ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাজা দ্বিতীয়, আর নীরব সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। নীরব চণ্ডীবের এলাকার ব্লু-বার্ড স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। নাজা ছিলেন রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বেলা আড়াইটার দিকে স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির পাশের একটি মাঠে খেলতে যায় নীরব। মাঠ লাগোয়া খাল। খালের পানিতে পা ভেজাতে গিয়ে পানিতে পড়ে তলিয়ে যায়।
খেলার সাথিরা এই দৃশ্য দেখে বড়দের জানায়। বড়রা এসে নীরবকে খালের পানি থেকে উঠিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, হাসপাতালে আনার আগেই নীরবের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে আসেন নাজাও। এসেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে লাশের সঙ্গে নাজাও বাড়িতে আসেন। বাড়ির সামনে লাশ রাখার কয়েক মিনিটের মধ্যে নাজা ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যান। মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত নয়টার দিকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে নাজা মারা যান।
ছেলের পর মেয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে বাবা বাছির মোল্লা কেবল বলছিলেন, ‘আমার ঘর খালি হয়ে গেছে। তোমরা আমার দুই সন্তানরে এনে দাও।’
নীরব-নাজার চাচা নাছির মোল্লা বলেন, এমনটা কেমন করে হলো। এক দিনে দুইজন নেই।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক, পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভাই নীরব মোল্লা ও বোন নাজা বেগমের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রাত একটায় জোবাইদা ওয়াজির এতিমখানার মাঠে ভাই বোনের একত্রে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশগ্রহণ করে নীরব মোল্লা ও নাজা বেগমের জন্য উপস্থিত মুসল্লীদের কাছে দোয়া চান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মো: শরিফুল আলম, ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম, ভৈরব পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু।