(বাম থেকে) ফ্রান্সের গ্রিজমান, বেলজিয়ামের লুকাকু, ফ্রান্সের এমবাপে ও বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড
ক্রীড়া ডেস্ক : গ্রুপপর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রত্যেক পরতে পরতে নাটকীয়তা ছড়িয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ উপনীত হয়েছে সেমিফাইনালে। স্বপ্নের ফাইনালের মঞ্চে ওঠার লড়াই শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার থেকে। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। যা সরাসরি সম্প্রচার করবে নাগরিক টিভি, বিটিভি, মাছরাঙা টিভি ও সনি টেন-২।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ইতালি ও জার্মানি, চারটি করে। এই তালিকায় ফ্রান্সের নাম থাকতে পারত। কিন্তু তাদের ভাগ্য সহায়তা করেনি বলে সেটা হয়নি। ১৯৩০ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের ১৫ আসরে অংশ নিয়ে তারা ছয়বার সেমিফাইনালে উঠেছে। এর মধ্যে ১৯৯৮ বাদে অন্য চারবার সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে তারা। যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। সেবার পেলের ব্রাজিলের কাছে ৫-২ গোলে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল। এরপর ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে দুইবার সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। প্রথমবার টাইব্রেকারে ও পরের বার ২-০ গোলে পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে শেষ চার থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ফ্রান্সকে। ১৯৯৮ সালে অবশ্য ঘরের মাঠে প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ নিয়েছিল ফরাসিরা। এরপর গেল ২০ বছরেও শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা।
২০০৬ সালে অবশ্য নিঃশ্বাস দূরত্বে থাকা শিরোপাটা হাতছাড়া হয়েছিল ফ্রান্সের। ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে মাতেরাজ্জিকে ঢুস দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ জিনেদিন জিদান। এরপর বাকি সময় দশজন নিয়ে খেলে থিয়েরে অঁরিরা। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ইতালির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে ফ্রান্স। এরপর ২০১০ সালে গ্রুপপর্ব ও ২০১৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে যায় ফ্রান্সের যাত্রা। ১২ বছর পর ষষ্ঠবারের মতো সেমিফাইনালে আসা ফ্রান্স অ্যান্তনিও গ্রিজমান, অভিলার জিরোড, কালিয়ান এমবাপ্পে, রাফায়েল ভারানের পারফরম্যান্সে ভর করে ১৯৯৮ পর আবার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। এবার পারবে কী সেমিফাইনালের বৈতরণি পার হতে? তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠতে এবং দ্বিতীয় শিরোপা শোকেসে তুলতে?
ফুটবল ঐতিহ্য ও ইতিহাসে ফ্রান্সের চেয়ে বেশ পিছিয়ে বেলজিয়াম। বিশ্বকাপে ১২বার অংশ নিয়ে তাদের সেরা সাফল্য সেমিফাইনাল। তাও ৩২ বছর আগে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে তারা পেয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে। তাদের ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে পায় স্পেনকে। সেখানে টাইব্রেকারে স্প্যানিশদের হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল। সেমিফাইনালে তারা সেবার পেয়েছিল দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে। দিয়েগো ম্যারাডোনা জোড়া গোল করে সেবার বেলজিয়ামদের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় করে দিয়েছিল। সেমিফাইনালেই থেমে যায় তাদের শিরোপা জয়ের মিশন। তবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তারা ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হার মেনে চতুর্থ হয়ে বিদায় নেয়।
৩২ বছর পর আবার সেমিফাইনালে এসেছে বেলজিয়াম। এবার সেমিফাইনালে তারা পেয়েছে ফ্রান্সকে। দ্রিস মার্টেন্স, ইডেন হ্যাজার্ড, ভিনসেন্ট কোম্পানি, রোমেলু লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইনি, থমাস ভারমালেন ও ফেলিয়ানিদের সমন্বয়ে সোনালি প্রজন্মে পরিণত হয়েছে তারা। তাদের ঘিরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বেলজিয়ামের মানুষ। পারবে কী তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে? বহুল কাঙ্খিত ৬.১ কেজি ওজনের শিরোপাটা বগলদাবা করতে?
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের মতো দলকে হারিয়ে রীতিমতো উড়ছে বেলজিয়াম। তাদের রক্ষণভাগ, মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগ বেশ শক্তিশালী। এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল তাদের (১৪টি)। এর আগে ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ব্রাজিল এতো গোল করেছিল। সেবার তারা শিরোপাও জিতেছিল। এবার কী তাহলে বেলজিয়ামের পালা?
ফ্রান্স তাদের ফুটবল ইতিহাসে যতগুলো দলের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খেলেছে তাদের মধ্যে অন্যতম বেলজিয়াম। দল দুটি এ পর্যন্ত ৭৩ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ বার জিতেছে বেলজিয়াম। ২৪ বার জিতেছে ফ্রান্স। ১৯ বার হয়েছে ড্র। বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হয়েছে। সবশেষ ১৯৮৬ সালে তারা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দল দুটি। সেবার ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল বেলজিয়াম। এবার কী পারবে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে উঠতে?