জীবনযাপন

নরসিংদীতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


কাউছার মিয়া, নরসিংদী সংবাদদাতা:
নরসিংদীতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগি। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা বরাবর গত ২৩ ও ৩০ এপ্রিল তারিখে সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য মোসা: ইয়াছমিন আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক অভিযোগ করেন এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগি।
২৩ এপ্রিল দাখিলকৃত অভিযোগে জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের খাদিমারচর গ্রামের মো: কুদ্দুস আলী সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের কার্ডধারী একজন সুবিদাভোগি। কার্ডে মেয়াদ শেষ পর্যায়ে বিধায় কয়েক মাস আগে ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য মোসা: ইয়াছমিন আক্তার নতুন কার্ড করে দেবার নাম করে তার কাছ থেকে পুরাতন কার্ড নিয়ে যায়। এর দু’দিন পর ওই মহিলা সদস্য নতুন কার্ড এসেছে বলে তাকে জানায়। তাকে ৩ শ টাকা নিয়ে এসে কার্ড নিয়ে যেতে বলে। সুবিদাভোগি কুদ্দুস আলী যথারীতি ইউপি সদস্য ইয়াছমিনের কাছে ৩ শ টাকা দিয়ে কার্ড নিয়ে যায়। বাড়ী গিয়ে তিনি দেখেন তার পুরাতন কার্ডই তাকে ফেরত দেয়া হয়েছে। তার জানা মতে তাদের গ্রামের আরো ২০/২৫ জনের কাছ থেকে পুরাতন কার্ড এবং পরে নতুন কার্ড বাবদ ৩ শ’ টাকা নেয় ওই মহিলা ইউপি সদস্য। নতুন কার্ডে বদলে পুরাতন কার্ড দেয়ার বিষয়টি মানুষের মাঝে বলাবলি করা হলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিষয়টি ফেইসবুকে ভাইরাল হবার পর ওই মহিলা ইউপি সদস্যে আরও অনেক প্রতারণার অভিযোগ বের হয়ে আসে।
৩০ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক ৩টি অভিযোগ করেন ওই ইউনিয়নের বালাপুর গ্রামের মোসা: মাহিনুর আক্তার, মো: শহিদ ও মো: আব্দুল রফিক। তাদের দেয়া অভিযোগে জানা যায়, মাহিনুরের পিতা মো: বশির উদ্দিন এবং অপর দুই অভিযোগকারীর নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রদানের জন্য গত মাস ছয়েক আগে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেন পাইকারচর ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য মোসা: ইয়াছমিন আক্তার। কিন্তু গত আড়াই মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রদান করা হয়। কিন্তু তাদেরকে কোন কার্ড প্রদান করা হয়নি। বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া হবে জানতে পেরে তারা ওই মহিলা সদস্যেও কাছে গেলে তিনি তাদেরকে পরিষদে যেতে না করেন। তাদেরকে বলেন প্রত্যেকের কার্ড তিনি বাড়ী পৌছে দিবেন। কিন্তু আজও পর্যন্ত তারা বয়স্ক ভাতার কোন কার্ড পাননি। এমনকি এখনও তাদের কাছ থেকে নেয়া সেই ৩ হাজার টাকাও ফেরত দেয়নি। বাধ্য হয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু দীর্ঘ একমাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ওই প্রতারক ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় ভুক্তভোগিরা গতকাল রবিবার (১ জুন) স্থানীয় সাংবাদিকদেও স্মরণাপন্ন হন।
এব্যাপারে ভুক্তভোগি মো: কুদ্দুস আলী বলেন, ‘১০ টাকা কেজি চালের নতুন কার্ডের এজন্য ইয়াছমিন মেম্বারের কাছে আমি পুরান কার্ড ও ৩ শ’টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছি। জানিনা নতুন তালিকায় আমার নাম থাকবে কিনা। যদি তালিকায় নাম না থাকে তবে আমাদের মত গরিবরা কই যামু।’
অপর ভুক্তভোগি মো: আব্দুল রফিক বলেন, আমি দুই দফায় ইয়াছমিন মেম্বারকে বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য টাকা দেই। প্রথম দফায় প্রায় বছরখানে আগে তাকে ৩ হাজার টাকা দেই কিন্তু বয়স্ক ভাতার তালিকায় আমার নাম না আসায় অনেক পেরাপেরির পর তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ফেরত পাই। মাস ছয়েক আগে তালিকায় নাম তুলে দেবার এবং কার্ড দিবে বলে আমার কাছ থেকে আবার ৩ হাজার টাকা চাইলে আমি দ্বিতীয় দফায় ২ হাজার টাকা দেই। যা পূর্বে অফেরতকৃ ১ হাজার টাকাসহ ৩ হাজার টাকা হয়। এখন সে আমার কার্ডও দেয় না টাকাও ফেরত দেয়না। আমার মত একজন গরিব অসহায় কর্মহীন মানুষ কত কষ্ট করে তাকে টাকা দিয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *