সমাধান ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারো মান ভাঙাতে আর যাব না। সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয় তাহলে সেখানে আর যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি জানাতে গুলশানে তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ওই সময় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মূল ফটক না খুললে প্রধানমন্ত্রীকে সেখান থেকেই ফিরে আসতে হয়েছিল।
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, দেশের রাজনীতিতে নীরব রাজনৈতিক অভিমান চলছে। এই মান-অভিমান দূর হবে কীভাবে? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অভিমান কি না আমি জানি না। এটা নীতিগত, রাজনৈতিক ও আইনগত বিষয়। কেউ যদি দুর্নীতি করে, বোমা-গ্রেনেড মারে, চুরি, খুনের মতো অপরাধ করে তাহলে তার শাস্তি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি যার যার আদর্শ থেকে হয়। কিন্তু দেশটা সবার। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই রাজনীতি করি আমরা। নিজের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনীতিতে জনগণকে কী দিতে পারলাম, সেটাই মুখ্য বিষয়। নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারি বলেই আমরা অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক বেশি উন্নয়ন দেশের জন্য করতে পেরেছি। যে কারণে গ্রাম পর্যন্ত আজকে উন্নয়নের চিত্র দৃশ্যমান। কিন্তু অন্য যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজের চিন্তা করেন।
মিয়ানমার বাধ্য হবে :
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে বাধ্য হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমসটেক ফোরামে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে সমস্যাটি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক বিষয় সংশ্লিষ্ট হওয়াতে শুধু দ্বিপাক্ষিকভাবেই আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা মিয়ানমারের সাথে ব্যাপক দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে, ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশ হতে বিতারিত করা ইস্যুতে তদন্ত পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে মিয়ানমার সরকারের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
যোগাযোগে যুগান্তকারী উন্নয়ন :
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে বলেন, জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-২০৩০ অর্জনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদ গড়ার লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মাল্টিমোডাল যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ আমরা সকল খাতে সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত করার জন্য আমরা জোনভিত্তিক ১০টি গুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এর আওতায় পর্যায়ক্রমে সারা দেশের ৩ হাজার ৮১৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ককে চার বা তার চেয়েও বেশি লেনে উন্নীত করা হবে। ইতোমধ্যে ৪৬৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেন বা তারও বেশি লেনে উন্নীত করা হয়েছে এবং ৪৩৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ চলামান রয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনগণের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন ও সহজ করা জন্য তার সরকারের ২০০৯ সাল থেকে নেওয়া বিভন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নয় বছরে ৯১৪টি সেতু ও ৩ হাজার ৯৭৭টি কালভার্ট নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করেছি।
ঢাকার পাশে উপশহর :
ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে যানজট কমানোর লক্ষ্যে রাজধানীর মতো ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোতে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা রাজউকের অধিক্ষেত্রে অবস্থিত। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট এবং জনজট উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। আগামী ২০২০ সালে এই প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। এ প্রকল্পে মোট ২৫ হাজার ১৬টি প্লটের সংস্থান আছে।
এর বাইরে ঢাকার ভেতরে যানজট নিরসন ও বিভিন্ন জনবান্ধব কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ঢাকার কাছাকাছি আরো কিছু শহরে প্লট উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিরক্ষায় অত্যাধুনিক ট্যাংক :
দেশের প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নবিষয়ক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের রামুতে দুটি পদাতিক ডিভিশন বরিশাল বিভাগের বাকেরগঞ্জ, মির্জাগঞ্জ এবং দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকায় ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপন করা হয়েছে।
নতুন নতুন বিভিন্ন সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বিভাগকে আরো বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক ট্যাংক এমবিটি-২০০, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের বিমানবহরে ফ্রান্সের তৈরি ডফিন হেলিক্টার, সর্বাধুনিক এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান’ গ্রন্থমালাটি সাত খণ্ডে প্রকাশ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পারিবারিক পেনশনের উপর ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ-অঞ্চলে অফিস, প্রশিক্ষণ ভবন এবং অফিসার ও নাবিকদের আবাসনের জন্য মোট ২২টি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনীর সামগ্রিক উন্নয়নের বিশদ বিবরণ জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।