সমাধান ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এ জোট।
রোববার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মির্জা ফখরুল।
এ সময় ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ন্যূনতম শর্ত এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে সাবেক নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদাসহ প্রায় সকল দল ও জনগণের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে একটা অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন।’
‘এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সাত দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে সাত দফা দাবি আমরা এর মধ্যে দিয়েছি, সেই দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার দাবি। আমরা নির্বাচনের বর্তমান তফসিল বাতিল করে এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণা করার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকাল এই নির্বাচন করা সম্ভব হবে।’
‘এখানে উল্লেখ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চারদলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বাচনের তফসিল দুই দফা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। সেই আন্দোলন সংগ্রামের পথে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, বলেন বিএনপির মহাসচিব।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনতো চলতেই থাকবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং পরিবেশ তৈরি করার জন্য আন্দোলন চলবে।’
ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল। এখন ‘দাবি থেকে না সরার’ কথা বললেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে মূল দাবি থেকে পিছু হটলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়া অধিকার হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচন দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের নির্বাচন হবে। একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্কট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটা সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।’
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। গত ৮ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট গ্রহণের তারিখ আগামী ২৩ ডিসেম্বর ঘোষণা করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২২ নভেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৯ নভেম্বর।