বিশেষ প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আমি মনে করি, এর ফলে নতুন করে আর কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না। আর এ নিয়ে আমি বিচলিতও নই। তার পদত্যাগের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আউয়াল খান এ পদে যোগদানের ১০ মাসের মাথায় গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে।
খেলাপি ঋণ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ অনুমোদনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটি নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে ব্যাংকটির এমডি পদত্যাগ করায় ব্যাংকটির বিষয়ে একটা নেতিবাচক বার্তা আসছে কি না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না, এমডির পদত্যাগের জন্য ব্যাংকটির কোনো সমস্যা হবে না।’
জানা গেছে, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় এবং নতুন ঋণ অনুমোদন নিয়ে এমডি পদে যোগদানের শুরু থেকেই আউয়াল খানের নানা ধরনের টানপোড়েন চলছিল। এসব দ্বন্দ্বের কারণে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি চেয়ারম্যানকে কিছু জিজ্ঞাসাও করিনি। এমডির পদত্যাগের বিষয়টি আমি খবরের কাগজ থেকেই জেনেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।
এমডির পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, এমডির পদত্যাগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি আগামী ৩০ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, সুদহার কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছর বেসিক ব্যাংক ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা লোকসান করবে- এমন পরিস্থিতি বুঝেই সমালোচনা এড়াতে তিনি আগেভাগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন।
মুহাম্মদ আউয়াল খান ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর বেসিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাকে তিন বছরের জন্য এই পদে নিয়োগ দেয়। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ৬৮ শাখার মধ্যে ২১টি শাখাই লোকসান গুনছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আমলের চার বছরে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়।
বর্তমানে ব্যাংকটির দেওয়া ঋণের ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশই খেলাপি। এখন তাদের মোট খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ তখনকার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বেনামে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। ওই ঘটনায় এমডিকে বরখাস্ত করে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। পরে আলাউদ্দিন এ মজিদকে চেয়ারম্যান এবং খোন্দকার মো. ইকবালকে এমডি করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।
এমডি খোন্দকার মো. ইকবালের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। পরে ২৩ অক্টোবর আউয়াল খানকে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আউয়াল খান এর আগে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকেরও এমডি ছিলেন।