মোশারফ হোসেন শ্যামল, বিশেষ প্রতিনিধি ॥
গত ৯ মে, বৃহস্পতিবার লিবিয়ার জুয়ারা থেকে অবৈধ ভাবে নৌ পথে ইতালি যাওয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে অভিবাসী বোঝাই নৌকাটি ডুবে গেলে ১৬জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৬০জন অভিবাসীর মৃত্যু হয় এবং বাকীরা নিখোঁজ রয়েছেন। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে অধিকাংশ যাত্রী ছিল বাংলাদেশী। ভাগ্যক্রমে বেঁেচ যাওয়া ১৪ অভিবাসীর মধ্যে দুজনের বাড়ি হচ্ছে কিশোরগঞে।জর ভৈরবে।
ভৈরব শহরের জাফর দালালের মাধ্যমে ইতালি যেতে গিয়ে সাগরে নৌকা ডুবির শিকার হওয়া শুম্ভুপুর পাক্কার মাথার বাসিন্দা আমির হোসেন (৩৫) ও পঞ্চবটী এলাকার বাসিন্দা ইফরান চৌধুরী (২৩)। গত ২১মে, মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফিরে আসার পর তাদের দেখতে বিভিন্ন বয়সের এলাকাবাসী লোকজন ভীর জমায়। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া আমির হোসেন ও ইরফান চৌধুরী ফিরে আসায় তাদের পরিবারের লোকজন আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অনেকটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে। অপরদিকে শহরের চন্ডিবের এলাকার দুই যুবক এখনো নিখোঁজ থাকায় তাদের পরিবারে সন্তান ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনচ্ছেন।
আমির হোসেন ও ইরফান চৌধুরী ( রাজু) ঘটনার বিবরণে জানান, দালাল জাফর মিয়ার মাধ্যমে গত এক বছর পূর্বে ইতালী যাওয়ার জন্য এদেরকে প্রভাবিত করলে তারা দালাল জাফরের কথামত প্রথমে সাড়ে চার লাখ টাকা দেয়। দালাল তাদেরকে প্রথমে দুবাই পাঠায়। পরে ঐ খান থেকে লিবিয়ায় নেয়। ঐ খানে যাওয়ার পর লিবিয়ার দালালরা তাদেরকে জিম্মি করে নির্যাতন করতে থাকে। দালালরা আমাদেরকে একটি কক্ষে তালা বদ্ধ করে রাখতো। ২/৩ দিনে একবার একটু শোকনা খাবার দিত। আমরা দালালদের সাথে কোন রকম কথা বলতে পারতামনা। কথা বলতে গেলেই তারা আমাদেরকে বেধড়ক মারধার করতো। চরম নির্যাতন করতো। বাড়িতে যোগাযোগ করার মত আমাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোনটিও দালালরা নিয়ে যেত। একটু পানি চাইলেও তারা আমাদের মারতো। লোহার রড, ব্যাল্ট দিয়ে মেরে আমাদেরকে রক্তাক্ত করে ফেলতো। কথা বললেই মার মার আর মার। টু শব্দটি করার ব্যবস্থা ছিলনা। আমরা শুধু বোবার মত বসে থাকতাম। নির্যাতন থেকে বাচতে বাংলাদেশ থেকে দালাল জাফরের কথা মত তাদের পরিবারের লোকজনদের কাছে মুক্তিপণ দিলে আমরা মুক্তি পাই। দীর্ঘ একবছরে কয়েক দফায় প্রায় ৯লাখ টাকা আদায় করে নেয় আমাদের কাছ থেিেক দালালরা। সর্বশেষ ১লাখ ২০ হাজার করে টাকা নিয়ে গত ৯মে, লিবিয়ার জুয়ারা থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে আমাদেরকে নৌকায় তুলে। ৩০জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দালালরা আনুমানিক ১০৫জন যাত্রীকে গাদাগাদি করে তুলে সাগর পথে রওনা দেন। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ফলে নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে পৌঁচ্ছালে নৌকাটি ফেটে যায়। নৌকায় রক্ষিত একটি ড্রাম আকড়ে ধরে সাগরে মধ্যে ভাসতে থাকি। যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমরা একটি হাসপাতালে। কিছুদিন যাওয়ার পর আইএমওএক্স নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে আমরা দেশে ফিরে আসি। জাফরের মত প্রতারক দালালদের মাধ্যমে আর কোন যুবক যেন ইউরোপের স্বপ্ন নিয়ে সাগরে মৃত্যুর কুলে পতিত না হয় বাংলাদেশ সরকার যেন প্রতারক দালালদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করেণ।
স্থানীয়রা জানান, ভৈরবের প্রায় ২০ জনের মত দালাল রয়েছে। তারা এলাকার যুবকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অল্প টাকায় ইতালিতে পাঠাতে পারবে বলে প্রভাবিত করে থাকে। দালালদের কথা মত যুবকরা তাদের পিতামাতাকে বাধ্য করে দালাদের চাহিদামত টাকা যোগার করে দিতে। আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় দারদেনা করে দালালের মাধ্যমে ইউরোপের উদ্দেশ্যে তাদের সন্তানদের পাঠায়। অল্প টাকার চুক্তি থাকলেও যুবকদের লিবিয়া নিয়ে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশী ও লিবিয়ান দালাদের যোগসাজসে তাদের জিম্মি করে বাড়ি থেকে দফায় দফায় মুক্তিপণ আদায় করে।
অভিভাবকরা জানান, দালালদের কথায় বিশ্বাস করে সন্তানদেরকে ইটালি পাঠাতে গিয়ে দালালদের প্রতারণায় আমরা নি:স্ব হয়ে গেছি। ধারদেনা করে সন্তানদের পাঠিয়ে ছিলাম একটু সুখের আশায়। মৃত্যুর মুখ থেকে আমাদের সন্তানরা ফিরে এসেছে। আমরা সরকারের কাছে এই রকম প্রতারক দালাল জাফরের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই।