রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন আদাবর নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই মনোনয় প্রত্যাশীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও হামলার মধ্যে পিকআপভ্যানের চাপায় দুইজন নিহতের ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান তুহিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার দিনগত রাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নিহত আরিফের বাবা উমর ফারুক একটি হত্যা মালা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৪৯। ফৌজদারি আইনের ৩০৪ ধারায় (বেপরোয়া যান চালনায় মৃত্যু) দায়ের করা ওই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান তুহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন আদাবর নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় মধ্যে পিকআপ ভ্যান চাপায় আরিফ হোসেন ও মো. সুজনসহ ১৪/১৫ জন আহত হয়। পরে পৃথক হাসপাতালে নেবার পর মারা যায় আরিফ হোসেন ও মো. সুজন। দুইজন নিহতের ঘটনায় নিহত দুজন ও আহতরা সবাই সাদেক খানের সমর্থক বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এটাই প্রথম নির্বাচনী সহিংসতার বড় প্রাণহানির ঘটনা।
ওই ঘটনায় আদাবর থানা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক পলাশ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুশফিক, সবুজ, মাসুদ, নজরুল ইসলাম, ৩০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলু, আনোয়ার হোসেন, ইদ্রিস, হালিমসহ ১২/১৪ জন আহত হয়।
আহত মুশফিক ও পলাশ জানান, প্রথমে ইট পাথর নিক্ষেপ করে ভীতি ছড়ানো হয়। এরপর রড, হকিস্টিক ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। ভীতি ও আতঙ্কে অনেকে পিকআপভ্যান থেকে নেমে দৌড় দেয়। ওই সময় পিকআপ ভ্যানটি পেছনে ব্যাক করতে গিয়ে উঠে পড়ে আরিফ হোসেন ও মো. সুজনের উপর। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেবার পর মারা যান ওই দু’জন।
সংঘর্ষের বিষয়ে শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যে দু’জন মারা গেছেন তারা আমার দল আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী। তাদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করলো তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে, জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো আর কারো নাম বলতে পারি না। কার লোক মেরেছে। তবে ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে ১২/১৪ জন। তারা সবাই বলেছে, যুবলীগের তুহিনের নেতৃত্বে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। আর তুহিন কার লোক সেটা সবাই জানে।’
আদাবর ৩০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিনের নের্তৃত্বে হামলা হয়েছে। আর তিনি নানক ভাইয়ের অনুসারী।
আরিফ ও সুজনের বন্ধু নুরুল আমিন জানান, সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তারা ১০-১২ জন বন্ধু মিলে নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখানে মিছিল করে একটি পিকআপ ভ্যানে ওঠে তারা। এর পরপরই কয়েকজন পিকআপটিতে ইটপাথর ছুড়তে থাকে। তাড়াহুড়ো করে সবাই নামতে শুরু করে। চালক পিকআপভ্যানটি পেছনে চালাতে থাকলে কয়েকজন পড়ে যায়। পিকআপটি সুজন ও আরেক কিশোরের ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আরিফ মারা যায়। গুরুতর অবস্থায় সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সুজনের মৃত্যু হয়।
নুরুল আমিন আরও জানান, নিহত সুজন নবীনগর হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডে থাকে। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে সে। তার বাবার নাম রুহুল আমিন।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করে। তার বাবার নাম মো. ফারুক হোসেন। ভোলা জেলার লালমোহনে গ্রামের বাড়ি। ঢাকার তুরাগ হাউজিংয়ের ঢাকা উদ্যান পানির পাম্পের পাশে তার বাসা।
সূত্র: জাগোনিউজ২৪