সমাধান ডেস্কঃআন্তর্জাতিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে প্রিয়া সাহা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় রয়েছেন বলে পিরোজপুরের সাংবাদিক মহল ও এনজিও সেক্টরের ব্যক্তিরা বলছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিরোজপুরের এক এনজিও কর্মী বলেন, হয়তো নিজের মেয়েদেরকে গ্রিনকার্ড পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রিয়া সাহা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
প্রিয়া সাহা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি বৃহত্তর যশোরে। প্রিয়ার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুদকের সদর দফতরে উপপরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ্মী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করেন।
এদিকে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত অসুস্থ থাকায় গত মঙ্গলবার রাতে প্রিয়া সাহা সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন।
ট্রাম্পের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বিলীন হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। সেখানে এখনো ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু থাকার জন্য সাহায্য করুন।’
ওই নারী আরও বলেন, ‘আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি, তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমিজমা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা (প্রসাশন বা সরকার) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এখন পর্যন্ত।’
এ সময় ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা ঘরবাড়ি দখল করেছে?’ উত্তরে ওই নারী বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ। তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’
প্রিয়া সাহার ওই অভিযোগের ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমালোচনার ঝড় বইয়ে গেছে। কেউ কেউ এই ঘটনার পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ‘ভয়ঙ্কর’ অভিযোগ করা প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন।
শুক্রবার রাতে লাইভ ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিকট তিনি (প্রিয়া সাহা) যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রোদ্রোহের সামিল। উনি বলেছেন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মাইনরিটি মানুষকে নাকি গুম করে দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা আছে তারাও নাকি গুম হওয়ার পথে। স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যেখানে বলেছেন, সম্প্রদায়িত সম্প্রীতির দেশ হলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা জায়গায় গিয়ে দেশের ভামূর্তি নষ্ট করার জন্য তিনি (প্রিয়া সাহা) যে বক্তব্য দিয়েছেন; একজন আইনজীবী হিসেবে আগামী রোববার আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আমি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবো।’
এদিকে ট্রাম্পের কাছে দেওয়া প্রিয়া সাহার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা জানিয়ে একটি পোস্ট করেন মন্ত্রী।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় একাধিকবার ভরা হাউসে পৃথিবীর সব দেশের এবং বাংলাদেশ ও বাইরের দেশের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। যেখানে শ্রদ্ধেয় রানা দাশ গুপ্তার মতো মানুষেরাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেয়া প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো কোন অভিযোগ বা প্রশ্ন কাউকে করতে দেখিনি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পও জানেন যে তার কাছেও মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। মার্কিন প্রশাসন তাদের এখানকার দূতাবাসের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত তথ্য পেয়ে থাকে এবং আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকি।’
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার অভিযোগ চক্রান্তের অংশ’