রাজনীতি

‘প্রধানমন্ত্রী কথা রাখেননি, মনে রাখবে প্রজন্ম’

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা অন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘কোটা আন্দোলনের ব্যাপক সফলতার মুখে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন কোটা পদ্ধতি থাকবে না। আর ২৭ জুন দাঁড়িয়ে বললেন কোটা পদ্ধতি থাকবে।’

‘সরকারি দল এখন বলার চেষ্টা করছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের নাকি একটা রায় আছে। আমি যতদূর জানি হাইকোর্টে এ বিষয়ে কোনো রায় আছে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও হাইকোর্টের যদি এ ধরনের কোনো রায় থাকে, সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ব্যাপারে আছে। নাতি-নাতনিদের ব্যাপারে আছে বলে আমি মনে করি না’,- বলেন মওদুদ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার নিজের কথা রক্ষা করতে, তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সরকারই তো হাইকোর্টে গিয়ে সেটাকে সংশোধন করতে পারে। যদি সরকার মনে করে হাইকোর্টের রায় হলো একমাত্র বাধা, তা না হলে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পালন করতে এখনও রাজি। তাহলে রোববার সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল একটু কষ্ট করে যান এবং সোমবারে বিষয়টি লিস্টে আনেন, তাহলে যদি রায়টাকে সংশোধন করে নেন বা রিভিউ করে নেন। কত ধরনের পথ আছে। যদি নিয়ত ঠিক থাকে তাহলে এটাই করতেন।

‘এ কথা বাংলাদেশের মানুষ এবং আমাদের প্রজন্ম তারা এটাকে মনে রাখবে। যে বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রাখেন নাই। এখন যেই কথা দিয়ে তিনি সরে যেতে চাইছেন সেই কথা মোটেও টেকসই নয়। যদি আপনারা সত্যিকার অর্থে কোটা প্রত্যাহার করে নিতে চান আর যদি বাধা থাকে হাইকোর্টে, তাহলে সেই বাধা আপনারা অবশ্যই দূর করতে পারেন’- যোগ করেন সরকারবিরোধী এই নেতা।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত এক ‘প্রতিবাদী যুব সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খেলাদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র বন্ধ’ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবিতে এ যুব সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিপীড়নের কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, ‘তিনজন নিরীহ ছেলে। রাশেদ ১০ দিনের রিমান্ডে। তার মা হাহাকার করছে। যে আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দেন। মা তো মা-ই। আপনিও তো (প্রধানমন্ত্রী) একজন মা। সুতরাং কেন এই অত্যাচার-নিপীড়ন। কালকে মরমাহত হয়েছি। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর একজন বলেছেন জঙ্গি। এই মন-মানসিকতাই হলো ফ্যাসিবাদ। এসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নেই। এটা সরকার জানে।’

‘তারা চায় মেধারভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ হোক, তারা এত কষ্ট করে লেখাপড়া করে। তাদের বাবা-মা গরিব। জমি বিক্রি করে তাদের লেখাপড়া করায়। তারা মেধাবি শিক্ষার্থী। তারা পরীক্ষায় প্রথম হয়। কিন্তু তারা কোটার জন্য চাকরি পায় না। কত বছর ধরে তারা এই ব্যথা বহন করছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই। এটা ন্যায্য কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে তরিকুলের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এই অপরাধের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই হবে। আজকে আপনারা ভাবতে পারেন, আপনাদের কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। কিন্তু এটা ভাববেন না। এটা ভাববেন না এ জন্য যে, সকলের ওপরে একজন মহাবিচারক সবকিছু দেখছেন।’

‘রাজনীতি একটি অত্যন্ত গতিশীল বিষয়, যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা তো এখন মনে করি, দেশের মানুষ মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। উপযুক্ত সময় আসলে, এখন না, আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। উপযুক্ত সময় এলে এমন উপযুক্ত কর্মসূচি দেয়া হবে, যার ফরে এই ফ্যাসিবাদি সরকারের পতন হবে,’- বলেন তিনি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্তি করে মওদুদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। যতই তারা ষড়যন্ত্র করুক তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্ত হবেন এবং নির্বাচনের আগেই আমরা তাকে মুক্ত দেখতে পারবো। বেগম খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই আমরা নির্বাচন করবো। খালেদা জিয়াকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

জাতীয় ঐক্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা যদি ঐক্যের প্রক্রিয়া সফল করতে না পারি, তাহলে দেশের মানুষ অত্যন্ত হতাশ হবেন। সেখানে কারও না কারও একটা ভূমিকা থাকতে হবে। আমাদের দেশের যারা সুশীল সমাজ তাদের তো আমরা খুব ভালো করে চিনি, যারা সরকারি মদদপুষ্ট।

‘ভারতে একটি শক্তিশালী বুদ্ধিজীবী, সিভিল সোসাইটি আছে, তারা সরকারের যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। আমাদের এখানে নেই তা নয়। আমাদের এখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আসিফ নজরুল, টিআইবি, সিপিডি আছে। কিন্তু তারা বড় কোনঠাসা,’- বলেন মওদুদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত্যুশয্যায়। গণতন্ত্রকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হলো জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সরকারের পরিবর্তন করা। এর অন্য কোনো বিকল্প আমরা দেখি না। এর কোনো বিকল্প নাই। কারণ ফ্যাসিবাদকে পৃথিবীর কোথাও সাধারণ নিয়মে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বর্তমান সরকার বা সরকার প্রধান মনে করে তারাই সরকারে থাকবে। বাংলাদেশে আর কারও কোনো অধিকার নেই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। যত দুর্নীতি, যত লুণ্ঠন, যত অত্যাচার-নির্যাতন যেভাবেই হোক আমরা ক্ষমতায় থাকবো। এখানে অন্য কোনো শরিক থাকতে পারবে না।

স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রমুখ।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখা অনৈতিক উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রদের যখন একটি আন্দোলন হলো, এতো বড় আন্দোলন আমি ১৯৫২ সালের পর আর দেখিনি। আন্দোলন যখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছিল, তখন সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দিলেন কোটা বাদ। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক চাতুরতায় তার বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *