এ.আর.মুশফিক : কেরে কামিগুয়াদা। হালকা-পাতলা গড়নের এই মানুষটি আজ গোটা কর্ণাটক রাজ্যের নায়ক। কারণ আশি বছর বয়স্ক এই বৃদ্ধ যে অসাধ্য সাধন করেছেন, সেটা পঁচিশ বছর বয়স্ক কোনো যুবকের কল্পনাতেও অসম্ভব। পাহাড়ি জনপদ আর জীবজন্তুর পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য অশীতিপর এই লোকটি নিজ হাতে খনন করেছেন ১৪টি পুকুর। শুধু তাই নয়, গোটা পাহাড়ি এলাকাজুড়ে লাগিয়েছেন হাজার হাজার বটগাছ।
কামিগুয়াদা তার মহৎ কাজ শুরু করেন আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে। তখন যুবক কামিগুয়াদা নিয়মিত তার ভেড়ার পাল নিয়ে পাহাড়ে যেতে শুরু করেন। পাহাড়ে যেয়ে ভেড়া চরাতে চরাতে তিনি লক্ষ্য করেন গোটা পাহাড়ে কোনো জীবজন্তুর আনাগোনা নেই। কিন্তু কেন? এই ভাবনা থেকেই তিনি বুঝতে পারেন আশেপাশে দশ-বারো মাইলের মধ্যে কোনো জলাধার না থাকায় গোটা পাহাড়টি প্রাণী শূন্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া তার ভেড়ার পালেরও পানি পানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
তারপরই কিছু একটা করার চিন্তা তার মাথায় আসে। সেই চিন্তা থেকেই একদিন সাত পাঁচ না ভেবেই গাছের ডাল দিয়েই গর্ত খোড়া শুরু করেন। কিছুদিন এভাবেই গাছের ডাল দিয়ে কয়েক ফুট গর্ত খুড়ে ফেলেন। অবাক করার বিষয় হলো- হঠাৎ গর্ত থেকে পানি বের হতে শুরু করে। উৎসাহ পেয়ে যান কামিগুয়াদা। এরপর একটি কোদাল দিয়ে গর্তটি বড় করা শুরু করেন। সেই থেকে শুরু। এরপর যৌবন, বার্ধক্য পেরিয়ে এখন তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। কিন্তু নিজের কাজ থেকে একটুও সরে আসেননি।
১৯৭০ সালে একটি গাছের ডাল দিয়ে যে ছোট্ট গর্ত খোড়ার উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন ২০১৭ সালে তা থেকেই তিনি ৬টি পুকুর খনন করেন। নিজের এই মহৎ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কার হিসেবে পাওয়া নগদ অর্থ তিনি নিজের বা পরিবারের কাজে ব্যয় না করে তা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে আরো ৮টি পুকুর খনন করেছেন। এছাড়া গ্রাম থেকে পাহাড়ে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তাও তৈরি করেছেন।
সমাজ আর প্রকৃতির জন্য যে কামিগুয়াদা এত এত করেছেন সেই তিনি এখনো জীবনযাপন করেন অত্যন্ত দীনহীন ভাবে। একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে স্ত্রী, দুই সন্তান ও পরিবার নিয়ে তার বাস। সারা দিন ভেড়ার পাল চরিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ। এভাবেই মানুষ আর প্রকৃতির সেবা করে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান পরিবেশবাদী কামিগুয়াদা।
সুত্র: ইন্টারনেট